সুহৃদ সুপান্থ
হঠাৎ করেই যেনো বদলে গেলো পুরো দৃশ্যপট। ৫ আগষ্ট সকালেও যে আওয়ামীলীগ ছিলো ফুরফুরে মেজাজে সেই দলই ইতিহাসের সবচে বড় বিপাকে আর গত ১৬ বছর ধরেই দৃশ্যত চাপে তাপে বিপর্যন্ত থাকা বিএনপি এখন উল্টো ফুরফুরে মেজাজে। ক্ষমতায় না এসেও ক্ষমতার সুবাস ছড়াচ্ছে দলটির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের চাপা যন্ত্রনা ভুলে যেনো মুুক্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে তারা।
দলীয় কার্যক্রমে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রতিদিন মিছিল সমাবেশে মুখর বিএনপি অফিস চত্বর। শুধু অফিসই নয়,শহরজুরেই রমরমা অবস্থা বিএনপির, প্রাণোচ্ছল নেতাকর্মীদের মুখরতায়।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফারুক আহমেদ সাব্বির বলছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা চলমান। চার বারে প্রায় সাত মাস জেল খেটেছি। কখনো ঢাকায়,কখনো রাঙামাটিতে। রাতে বাসায় থাকতে পারতাম না। রাতের পর রাত এর বাসায়,ওর বাসায় ঘুমাতে হতো। কখনো নৌকা নিয়ে কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে রাত্রিযাপন করতাম নেতাকর্মীদের নিয়ে। ৫ আগষ্ট বিকাল থেকে মুক্তি। জীবনে ফিরেছে স্বাভাবিক ছন্দ।’
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল বলছেন,মনে হচ্ছে দুঃসহ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি মিলেছে। কী ভয়াবহ ছিলো আমাদের নেতাকর্মীদের জীবন এটা বলে বোঝানো যাবেনা। এখন স্বস্তি।’
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ বলছেন,‘ মনে হচ্ছে অবরুদ্ধতার প্রাচীর থেকে মুক্তি পেয়েছি, রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটেছে,ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি,কখন পুলিশ আসে। অনেক সময় বাসায়ও থাকতে পারিনি। নিজের টেনশন,নেতাকর্মীদের টেনশন। দলীয় কর্মসূচীও ঠিকঠাকমতো পালন করতে পারতাম না। পুলিশের নজরদারি,চাপ,বের হতে না দেয়াসহ নানা কারণে। গত ৫ আগষ্ট বিকেলে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে,মুক্তি পেয়েছি এক অসহনীয় অবস্থা থেকে। সারাক্ষণ ভয়,ভীতি নিয়ে জীবন কাটাতে হতো আমাদের,এখন মুক্ত,স্বাধীন।
বিএনপি নেতাদের এমন মুক্তির আনন্দের মধ্যে একেবারেই বিপরীত চিত্র ১৬ বছরের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের। ৫ আগষ্ট আগের দিনের ফুরফুরে মেজাজে থাকা দলটির নেতাকর্মীরা এখন বেশিরভাগই পলাতক। জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় পুড়িয়ে নিঃস্ব করে দেয়ার পাশাপাশি জেলা শহরের বিভিন্নস্থানে হামলা হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের বসতঘর,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তবে শহর ছাড়িয়ে সবচে বেশি আক্রমন ও হামলা হয়েছে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায়। বাঘাইছড়ির আমতলী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া নানিয়ারচর,বরকল,কাউখালীতেও হামলা হয় অজস্র নেতাকর্মীর বসতঘরে। পুরো ঘটনায় বিপর্যস্ত আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা। এর মধ্যেই ১৫ আগষ্ট শোক দিবসের কর্মসূচী পালনের চিন্তা করলেও সহিংসতার শংকায় সেই ভাবনা থেকে সড়ে আসে তারা।
রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রনি হোসেন বলছেন, আমাদের কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা হতোদ্যম কিছুটা। তবে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু নেতারা এখনো কোন নির্দেশনা দেয়নি,ফলে আমরাও দ্বিধায় আছি,পরবর্তী করণীয় নিয়ে।
জেলা যুবলীগের সহসভাপতি শহীদুল আলম স্বপন বলছেন, আওয়ামীলীগের দুঃসময় এবারই প্রথম নয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরও আমাদের ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিলো। ক্ষমতার বাহিরে একুশ বছর থেকেও আমরা আবার ফিরে এসেছি। এবার দলের ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের পরও আবার আমাদের দল ঘুরে দাঁড়াবে, এই বিশ্বাস আমাদের আছে।’
রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর বলছেন, আসলে এমন একটি ঘটনার পর এখনো দল গোছানোর মত পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। কেন্দ্র থেকেও কোন নির্দেশনা পাইনি। আমরা এখনো জানিনা,ভারপ্রাপ্ত কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিনা। আপাতত নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক ও নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় পর্যায়ে গেছে যে, ১৫ আগষ্ট শোক দিবসওে বেশিরভাগ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ফেসবুক প্রোফাইলেও দেখা যায়নি কোনো স্ট্যাটাস বা শোকগাঁথা। একদিকে বিপর্যস্ত দল,অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় থাকা নেতাকর্মীদের পাশে নেই কেউই। পতনের আগের আর পরের জীবনের পার্থক্য যেনো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা।