শ্যামল রুদ্র, রামগড় ॥
খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বছর বছর জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা। ফলে রামগড় পৌরসভা, পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার এলাকার লক্ষাধিক মানুষ ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা থেকেও প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন।
২০১৮ সালে রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল কাঠামো রয়ে গেছে পুরনো অবস্থায়। বর্তমানে চিকিৎসকের ১৩টি পদের বিপরীতে স্থায়ীভাবে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩ জন চিকিৎসক, যার মধ্যে একজন নারী চিকিৎসক। ফলে নারী রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ এখন অনেকটা দুরূহ হয়ে উঠেছে।
হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারি, চক্ষু, অর্থোপেডিক এবং চর্মরোগ বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে সাধারণ চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা, জটিল রোগের চিকিৎসার কোনো সুযোগও এখানে নেই। জরুরি অবস্থা বা দুর্ঘটনায় পড়লে রোগী ও স্বজনদের দিশেহারা হতে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন বলেন, জরুরি সেবা নিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কখনও কখনও চিকিৎসকই পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে চিকিৎসা ছাড়াই ফিরে যেতে হয়।
শুধু রামগড় নয়, পাশের ফটিকছড়ির বাগানবাজার এলাকার কয়েক হাজার মানুষও এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল। তাঁদের ভোগান্তির চিত্রও একই রকম।
চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি হাসপাতালের ল্যাবরেটরির অবস্থা অত্যন্ত করুণ। জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতির কারণে সঠিক রোগ নির্ণয় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।
নার্স, টেকনিশিয়ান ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট সার্বিক সেবাকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। হাতে গোনা কয়েকজন নার্স ও কর্মচারী দিয়ে পুরো হাসপাতাল চালাতে গিয়ে সময়মতো রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
চিকিৎসক সংকটের এই পরিস্থিতিতে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টায় অনেক সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি ও প্রাথমিক সেবা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে।
সম্প্রতি অপারেশন থিয়েটার চালুর লক্ষ্যে কিছু জনবল যোগদান করেছে। ইতিমধ্যে একটি সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। তবে এই বিভাগের চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র একদিন রামগড়ে থাকেন। এর ফলে সিজারসহ অন্যান্য সার্জিক্যাল কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয়রা মনে করছেন, নিয়মিত অপারেশনাল সেবা চালু করতে আরও পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল প্রয়োজন। টিএইচএফপিও মোজাম্মেল হক এ প্রসঙ্গে জানান, আমি তাঁকে কমপক্ষে তিনদিন থাকতে বলেছি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে কেবল আশ্বাস মিলছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক রোগী চট্টগ্রাম, ফেনী এমনকি ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে চিকিৎসা ব্যয়, যাতায়াত খরচ এবং সময়ের অপচয় যেমন বাড়ছে, তেমনি জীবন ঝুঁকিও বাড়ছে। বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এ চাপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, চিকিৎসক ও জনবল সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। নতুন চিকিৎসক নিয়োগের আশ্বাস পেয়েছি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে নতুন জেনারেটর স্থাপনের কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।