শ্যামল রুদ্র, রামগড়
পরিবেশ ও বন আইন না মেনে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা লাগোয়া উত্তর ফটিকছড়ির একেবারে শেষপ্রান্তে রামগড় চা বাগানে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ। বাধা দিতে গিয়ে বন কর্মকর্তারা বাগান কর্তৃপক্ষের অশুভ আচরণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধ ও বৃহস্পতিবার কাটা এসব গাছ সুযোগ বুঝে অন্যত্র পাচারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে। বনবিভাগ বলছে বাগান ব্যবস্থাপক অবৈধভাবে এসব গাছ কেটে বাইরে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
সরেজমিন জানা যায়, রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে সড়ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চা বাগানের তালতলা ২৪ ও ২৫ নম্বর সেকশন এলাকায় ছায়া প্রদানকারী বড় বড় প্রায় ২০-২৫টি তেলসুর-মেহগনি গাছ সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়া কেটে ফেলেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। কাটা গাছগুলো প্রাথমিকভাবে ট্রাক ভর্তি করে বাগানের ভেতর স’মিলে নেওয়া হয়েছে। পরে এখানে চিড়াই করে বাইরে নেওয়া হবে। অসংখ্য কাটা গাছের গোড়া ধ্বংস যজ্ঞের সাক্ষী হয়ে ওই সেকশনে রয়েছে। বন কর্মকর্তারা বলছেন, বনবিভাগ, সড়ক ও জনপদ এবং বাগান কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে কাটা হলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।
স্থানীয়রা জানান, খেটে-খাওয়া নিরীহ চা শ্রমিকদের মানব ঢাল হিসাবে এখানে ব্যবহার করে বাগান কর্তৃপক্ষ। বন বিট কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, শ্রমিকদের লেলিয়ে দেওয়ায় তাদের পিছু হটতে হয়। অন্যথায় মার খেতে হতো। বাগান ব্যবস্থাপক মি. জয়নাল বনকর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জানা গেছে, ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১৪০০ একর আয়তনের এই বাগানে চা প্লান্টেশন রয়েছে ৮০০ একরের মতো। ছায়াবৃক্ষ কাটার প্রয়োজনে ‘বাংলাদেশ টি বোর্ড’ ও ‘বন বিভাগের’ অনুমতিসহ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভাগের পূর্বানুমতি ছাড়াই পুরাতন ছায়াবৃক্ষ কাটতে শুরু করে। সূত্র জানায়, মুখার্জি গ্রæপ থেকে ম্যানেজমেন্ট চেঞ্জ হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে কমপক্ষে ৩ কোটি টাকার গাছ পাচার হয়েছে এ বাগান থেকে। দীঘির (জলাধার) পাশের শতবর্ষী গর্জন গাছের বাগানটি এখন বিরানভূমি। এক সময় বাগানটি বুনো প্রাণীদের অভয়ারণ্য ছিল। হাজার হাজার গাছ বাইরে পাচার হয়েছে। বিভিন্ন সেকশনের গাছ কাটার এধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। ছায়াবৃক্ষ ও অন্য প্রজাতির গাছ কেটে বেশ কিছু দিন ধরে পাচার হলেও বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এক নম্বর গেইটে(২৪ ও ২৫ নম্বর সেকশন) রামগড়-হেঁয়াকো সড়কের পাশে ১৫-২০ জন শ্রমিক দিয়ে অন্তত ২০-২৫টি বৃহৎ আকারের তেলসুর-মেহগনি গাছ কেটে তাৎক্ষণিক গাড়িতে করে নিয়ে যায় বাগানের ভেতর। শ্রমিকরা জানান, বাগানের ম্যানেজারের নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
হেয়াকোঁ বন বিট কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, বনবিভাগের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা অবৈধ। এসব গাছ কাটার কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। খবর পেয়ে তিনি সরেজমিন গিয়ে দেখেছেন বাগানের ম্যানেজারের নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে। এনিয়ে ম্যানেজার ও শ্রমিকদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয় তাঁর। তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বাগান ম্যানেজার ও শ্রমিকদের মারমুখি আচরণের কারণে গাছগুলো জব্দ করা যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে। এরকম প্রশ্নে বনবিট কর্মকর্তা বলেন, যেজন্যই হোক, প্রথমে বন বিভাগের অনুমতি লাগবে।
এ বিষয়ে জানতে বাগান ব্যবস্থাপক জয়নাল আবদীনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বন সংরক্ষক হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, বিনা অনুমতিতে গাছ কাটার সময় বাধা দেওয়ায় ৩জন বিট কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করা হয়। বাগান ব্যবস্থাপক ও শ্রমিকদের মারমুখী আচরণে তাদের ফিরে আসতে হয়।
গাছ কাটার সঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন অস্বীকার করে বলেন এবিষয়ে তারা অবগত নন। বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের জানাননি।