জিয়াউল জিয়া
রাঙামাটির লংগদুতে কৃষি কর্মকর্তাদের অবহেলায় এক কৃষকের প্রায় চার একরের মতো তরমুজ বাগান ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠে মারা যাচ্ছে ফসলের চারা। কি রোগে আক্রান্ত বাগান জানেন না কৃষি বিভাগ। একই সাথে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ঠিকমতো কৃষকদের সাথে যোগাযোগ না করা এবং ফোন করেও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় সবজি ও ফল চাষের সুমান পুরো জেলায়। মৌসুমের বিভিন্ন ফল চাষের ব্যাপক উৎপাদন হয় এই উপজেলায়। সম্প্রতি উপজেলার ঘনমোড় এলাকায় তুরমজ চাষী মো. আব্দুর রহিম তরমুজ চাষ করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার অভিযোগ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং সময়মত পরামর্শ না পাওয়ায় এই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছেন তিনি।
লংগদু কৃষি অফিসের তথ্য মতে, করল্যা, চিঙ্গা, লাউ, পেপেসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজির বেশি উৎপাদন হয় উপজেলার বগাচতর, গুলশাখালী ও ভাস্যান্যাদম ইউনিয়নে। প্রতিবছর প্রায় ৮-১০ টন সবজি উৎপাদন হয়। গত বছর ১৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিলো এতে ব্যাপক ফলন হয় এবং কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবছরও ১৪০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করে কৃষক। এরমধ্যে অনেক বাগানে গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। যাতে এবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা।
তরমুজ চাষী মো. আব্দুর রহিম বলেন, ভাসান্যাদম ইউনিয়নের ঘনোমড় এলাকায় বিভিন্ন কৃষক চট্টগ্রামের বীজ ভান্ডার থেকে তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে। আমিও তাদের মতো বীজ ভান্ডার থেকে বীজ সংগ্রহ করে রোপন করি। পরবর্তীতে চারা বড় হওয়ার মাস খানেকের মধ্যে গাছের চারায় বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে শুরু করে। আমাদের ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার বণিক এর সাথে ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারি না। পরে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়েও কোন সমাধান পাইনি।
তিনি আরও জানান, লংগদু কৃষি অফিসে কোন ধরনের সহযোগিতা না পেয়ে আমি রাঙামাটি কৃষিবিদ হারুনুর রশিদের সাথে যোগাযোগ করি। ওনি মাটি ও গাছের চারা পরীক্ষা করে ওনার দোকান থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকার মতো ঔষধ দেয়। সেগুলো ব্যবহার করেও আমি আমার প্রায় ৪ একরের প্রায় ২ হাজার ৯ শত থালি তরমুজ চারা বাচাতে পারলাম না। এতে আমার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি এই চাষের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়েছি। এই ঋণ আমি কিভাবে শোধ করবো বুঝতে পারছি না। আমি আমার পরিবার নিয়ে কিভাবে বাঁচবো। আমাকে বাঁচার পথ কে দেখাবে।
এই ইউনিয়নের আরেক তরমুজ চাষী মো. হারুন মিয়া বলেন, গত বছর তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় এবছরও দেড় একর জমিতে চাষ শুরু করি। চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চারা। এই বিষয়ে কৃষি অফিসে কেউ আমাদের সমস্যা সমাধানে মাঠে আসে না। আমরা তাদের কাছে গেলে এটা সেটা পরামর্শ দিলেও বাগান বাচাতে পারছি না। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে কৃষক মাঠে কষ্ট পাচ্ছে।
কৃষিবিদ হারুনুর রশিদ জানান, ওনি আমাকে একটি গাছের চারা দেখায় আমি আমি তাকে কিছু ঔষুধ ব্যবহার করতে বলি। আমাকেও কয়েকবার যেতে বলেছেন। আমি জুরাছড়িতে চাকরি করি। আমি তাকে প্রথমে লংগদু কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে বলি। এরপর আর তেমন কিছু জানি না।
ভাসান্যাদম ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার বণিক বলেন, পুরো ইউনিয়নে আমি একা। আমি যতটুকু পারি আমি সময় দিই। কৃষক ফোন করেও আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ওই কৃষক আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। ফোন করলে অবশ্যই আমি বিষয়টি দেখতাম।
লংগদু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ভাসান্যাদম ইউনিয়নটি অনেক বড় এবং দুর্গম। সেখানে একজন কর্মকর্তা দিয়ে পুরো ইউনিয়ন কভার করা কঠিন। অশোক কুমার বণিক নামের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভাসান্যাদম ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি এলাকার দায়িত্বে। যে কৃষকের ক্ষতির কথা শুনলাম, ওনি যদি আমাদের কারো সাথে যোগাযোগ করার পরও কৃষক যদি উপকার না পা তাহলে এই বিষয়ে ওই কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে কৃষক যদি কোন বীজ সারের দোকান থেকে কিটনাশক নিয়েও প্রতারিত হন সেটিও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকের পাশে কৃষি অফিস সব সময় থাকবে।
তিনি আরও বলেন, লংগদুতে ২১ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ১১ জন, এরমধ্যে ৪ জন বিভিন্ন জায়গায় সংযুক্তিতে (ডেপুটেশন) আছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি।
রাঙামাটি উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তরমুজের বিষয়টি আমি শুনিনি। আমি খোঁজ নিব, যাতে সব উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা যাতে দ্রæতই সবগুলো তরমুজ চাষীদের কাছে যায়। ফলনের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইবো। তিনি আরও বলেন, অনেক কর্মকর্তা লবিং করে ডেপুটেশন রাঙামাটি চলে আসে। এমন এমন মানুষের সুপারিশ থাকে আমরাও অনেক সময় নিরুপায় হয়ে যায়। তবুও কারা কারা কতদিন ধরে ডেপুটেশনে আছেন তাদেয় দ্রæতই স্ব কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।