আরমান খান, লংগদু ॥
করাতকল স্থাপনে লাইসেন্স নিতে হয় বন বিভাগ থেকে। লাগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। মানতে হয় আরো কিছু নির্দিষ্ট বিধিমালা। রাঙামাটির লংগদুতে এসবের কোনো তোয়াক্কা নেই। নিয়ম নীতি না মেনে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলে উজাড় হচ্ছে প্রাকৃতিক বন। রাঙামাটির লংগদুতে অনুমোদনহীন গড়ে ওঠা প্রায় ৩০টি করাতকলে প্রতিদিনই চেরাই হচ্ছে কয়েক হাজার ঘনফুট কাঠ।
করাতকলের অনুমোদন পেতে হলে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয়। করাতকল বিধিমালা ২০১২ তে বলা আছে, বিশেষ করে সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত বা অন্য যে কোন ধরনের সরকারি বন ভূমির সীমানা হইতে নূন্যতম ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাইবে না। এছাড়া কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এইরূপ কোনো স্থানের নূন্যতম ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না কোথাও।
সরেজমিনে রবিবার সকালে উপজেলার অদূরে বাইট্টাপাড়া, আলতাফ মার্কেট, ইসলামাবাদ ও আটারকছড়া এলাকা ঘুরে যত্রতত্র অবৈধ করাতকল স্থাপন করতে দেখা গেছে। এসময় বাইট্টাপাড়ায় বাবুলের করাত কলে গিয়ে দেখা যায় কাঠ চেরাইয়ের কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এই করাতকলের চারপাশে অসংখ্য বড় বড় গাছের গুড়ি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। এসব গাছের প্রায় সবগুলোই প্রাকৃকি বন থেকে সংগ্রহ করা। এছাড়াও এই করাত কলের একশ গজের মধ্যে রয়েছে একটি ইবতেদায়ী মাদ্রসা ও মসজিদ। এবং এটি একটি আবাসিক এলাকা।
কাঠ চেরাই করতে আসা ব্যবসায়ী সাদিম হোসেন বলেন, এসব কাঠ অনেক দূরের পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা। এগুলো প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া চাপালিশ, বাদি, জাম, সুরুজ ও মনছোবা জাতের বড় বড় গাছ। মুলত এই কাঠ ঘর তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে মধ্যে একটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০টি করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব কারতকলের মধ্যে একটির অনুমোদন রয়েছে বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়। বাকিগুলোর কোনো অনুমোদন নাই। অনুমোদনহীন করাতকলের মধ্যে লংগদু সদর ইউনিয়নে ৭টি, মাইনীমূখ ইউনিয়নে ৮টি, আটারকছড়া ইউনিয়নে ৭টি, গুলশাখালী ইউনিয়নে ২টি, বগাচত্বর ইউনিয়নে ৩টি এবং ভাসান্যাদম ইউনিয়নে ৩টি করাতকল রয়েছে।
অনুমোদনহীন এসব করাতকলের বিষয়ে করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি রহমত আলী জানান, কয়েকটি করাতকলের অনুমোদন আছে বাকিগুলো অনুমোদনের জন্য সবাই আবেদন করেছে। শিঘ্রই এসব করাতকলের অনুমোদন হয়ে যাবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী এবিএস মামুন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন হুমকির মুখে। এখানে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজার হচ্ছে। তামাকচুল্লি ও ইটভাটায় পুড়ছে শতশত টন কাঠ। বন্যপ্রাণির আশ্রয়স্থল উজারের ফলে লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে আসছে হাতি, বানর ও হনুমান। এতে প্রায় সময় মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। উন্নয়নের অজুহাতে বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে এবং আইন প্রয়োগে প্রশাসনকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে লংগদু বনবিভাগের উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজিব মজুমদার বলেন, অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো করাতকলে অভিযান চালিয়ে করাত কল মালিকদের জেল জরিমানা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারো অভিযান চালানো হবে এবং অনুমোদনহীন করাতকল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আকিব ওসমান বলেন, আমি যতদূর জানি একটি মাত্র করাতকলের অনুমোদন আছে বাকি সবগুলোই অনুমোদনহীন। এসব করাতকলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি করাতকলে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।