আরমান খান, লংগদু
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে বাগান বাড়ি উচ্ছেদ করে এক ব্যবসায়ীর জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অভিযোগের তীর স্থানীয় হেডম্যান (মৌজা প্রধান) আব্দুল হালিম ও ইউপি সদস্য গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত হেডম্যান ও মেম্বার তার ভোগ দখলীয় নিজস্ব বাগান বাড়ির ফলদ ও ঔষধি গাছের বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা কেটে পাঁচ একর জমি দখলে নিয়েছেন। এ ঘটনা গত ৭ ফেব্রæয়ারি লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়নের রাজনগর বিজিবি জোন সংলগ্ন এলাকায় ঘটে বলে জানা গেছে। এরপর অপরাধী দখলদারদের চিহ্নিত করে গত ২৩ ফেব্রæয়ারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডির বরাতে জানা যায়, বিগত ছয় বছর পূর্বে বড়ভাই রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ১১৬৯ নং হোল্ডিং এর রেকর্ডীয় পাঁচ একর জায়গা ক্রয় করে এ পর্যন্ত ভোগ দখল করে আসছেন ভুক্তভোগী।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি গোলাম মাওলা ওরফে মাওলা মেম্বার আমার জায়গা ক্রয় এবং বর্গা নেওয়ার জন্য আমাকে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমার জায়গা আগে থেকেই জনৈক রানা মিয়াকে বর্গা দিয়ে রাখি। এজন্য মাওলা মেম্বারকে জায়গা ক্রয় এবং বর্গা না দিলে তিনি আমাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। এর কিছুদিন পর হেডম্যান হালিম আমার জায়গা ক্রয় করার প্রস্তাব দেয়। আমি বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সেও আমাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী আরো জানান, হেডম্যান হালিম আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় যে, আমি যদি জায়গা বিক্রি না করি তাহলে আমাকে আমার জায়গায় যেতে দিবে না এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে।
থানার সাধারণ ডায়েরির তথ্যমতে, গত ৭ ফেব্রæয়ারি মাওলা মেম্বার ও হেডম্যান হালিম উক্ত জায়গা সকলের অগোচরে রাতের আঁধারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৫০০টি গাছ কেটে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য বিশ লক্ষ টাকা। এছাড়াও তারা ফলের বাগান নষ্ট করে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা বলেন, জমি দখল চেষ্টার প্রশ্নই ওঠে না। আমিতো মোহাম্মদ আলীকে চিনিই না এবং এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে ওই জমি যিনি নিজের দাবি করছেন, তাঁর কাগজপত্র থাকলে তিনি দেখাবেন। তিনি আরও বলেন, এ জায়গার মালিক হেডম্যান হালিম। অযথাই আমার নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
অপর অভিযুক্ত ৩৮৬নং গুলশাখালী মৌজার হেডম্যান আব্দুল হালিম বলেন, মোহাম্মদ আলী যে ৫ একর জায়গা তার বলে দাবি করছে সেটা মূলত কার তা কাগজপত্র দেখে বলতে পারবো। তবে আমার জানামতে ঐ জায়গার পাশেই মোহাম্মদ আলীর ২০একর জায়গা ছিল যা ৩৭রাজনগর বিজিবি জোন অধিগ্রহণ করেছে। সঠিক দলিলাদি নিয়ে আসলে তাকে সহযোগিতা করবো। তবে আমি তার জায়গা দখল করি নাই। সে কেন এমন অভিযোগ করেছে তা আমার জানা নাই।
এদিকে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীর অভিযোগের সূত্রধরে সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় পাঁচজন শ্রমিক বাগানের কাটা গাছের ডালপালা সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে। এছাড়া আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুরো বাগান পরিষ্কার করার চেষ্টা করছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য গোলাম মাওলা। এসময় তিনি ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীর সাথে বাগবিতন্ডায় জড়ান। প্রতিবেশিরাও মেম্বারের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, সম্প্রতি হেডম্যান ও মাওলা মেম্বার মিলে এজায়গা প্রথমে ১৪ লাখ, পরে ১৬ লাখ এবং সর্বশেষ ১৮ লাখ টাকায় কিনতে চেয়েছেন। জমি বিক্রি না করার কারণে মূলত তারা একটি অসাধু চক্রের যোগসাজশে জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমি দখল ও হুমকির বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ঐ জমি পরিদর্শন করা হয়েছে।