আরমান খান, লংগদু
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ করাত কল। বনবিভাগের চোখের সামনে সড়কের পাশে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে অধিকাংশ করাত কল। যার একটিরও নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। এরই মধ্যে নতুন করে আরো একটি করাত কল চালু করেছেন স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা। উপজেলার ডাঙ্গাবাজার এলাকার লংগদু-দীঘিনালা সড়কের পাশেই বনবিভাগের উল্টাছড়ি রেঞ্জ এলাকায় সম্প্রতি এই করাত কলটি চালু করা হয়। যৌথভাবে এটি চালু করেন উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম মনির ও শহর আলী নামের এক ব্যবসায়ী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লংগদু উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০টি করাত কল গড়ে উঠেছে। অনুমোদনহীন করাত কলের মধ্যে লংগদু সদর ইউনিয়নে ৭টি, মাইনীমূখ ইউনিয়নে ৮টি, আটারকছড়া ইউনিয়নে ৭টি, গুলশাখালী ইউনিয়নে ২টি, বগাচত্বর ইউনিয়নে ৩টি এবং ভাসান্যাদম ইউনিয়নে ৩টি করাত কল রয়েছে। এসব অবৈধ করাত কলের বেশিরভাগ মালিকই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে জানা যায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করাত কলের চারপাশে বেশ কিছু কাঠ রাখা আছে। যার বেশিরভাগই প্রাকৃতিক বন থেকে সংগ্রহ করা। এছাড়াও কিছু সেগুন কাঠের স্তুপ দেখা যায়। আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা এসব করাতকল গত কয়েক বছরেও উচ্ছেদ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনবিভাগের নীতিমালায় (সংরক্ষিত আইন) করাত কল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ এর ৭ ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত, রক্ষিত, অর্পিত ও অন্য যে কোনো ধরনের সরকারি বনভূমি ও আন্তর্জাতিক স্থলসীমানার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যানে করাত কল স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সড়কের পাশে করাত কল থাকায় বনের কাঠ সহজেই পরিবহন করে করাত কলে এনে চেরাই করতে পারে। দিনে এবং রাতে প্রশাসনের সামনেই এসব কাঠ পরিবহন ও চেরাই করা হয়। বছরে দু’একবার বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন মোবইল কোর্ট পরিচালনা করে সামান্য কিছু জরিমানা করলেও স্থায়ীভাবে একটিও উচ্ছেদ করা হয় না। ফলে নতুন করে আরো করাত কল স্থাপনের সুযোগ নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। তবে এসব করাত কলের মালিকরা জানান, এ উপজেলাতে করাত কলের জন্য কোনো লাইসেন্স দেয় না কর্তৃপক্ষ। ফলে অবৈধভাবে করাত কল স্থাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সদ্য গড়ে ওঠা করাত কলের মালিক যুবলীগ নেতা হাফিজুল ইসলাম মনির বলেন, অনুমতিপত্র পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেই করাত কলের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে অনুমতিপত্র না পাওয়া গেলে বাকিগুলো যেভাবে চলে আমারটাও একইভাবে চলবে বলে জানান। করাতকলটির অপর মালিক শহর আলী জানান, এই করাতকলটি আগে উত্তর ইয়ারিংছড়ি এলাকায় ছিল। আমরা জানুয়ারি মাসের শুরুতে নতুন করে এখানে স্থাপন করি। সরকারের নিয়ম মেনে করাত কল করা সম্ভব না। সবাইতো আইন অনুয়ায়ী চলে না। আমরা রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে। সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকি।
এ বিষয়ে বনবিভাগের উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহাবুব উল আলম বলেন, অবৈধ করাত কলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি করাত কলে অভিযান পরিচালনা করে ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করেছেন। দ্রæত এসব অবৈধ করাত কল উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।