আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান ॥
বান্দরবানের লামায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরাদের দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। শুক্রবার সকাল এগারোটায় তিনি বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের নতুন তংগোঝিরি পাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানে ভুক্তভোগী এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরিদর্শনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এমনিতেই স্পর্শকাতর জায়গা। এখানের পার্শ্ববর্তী রয়েছে মিয়ানমার। সেখানে চলছে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। মিয়ানমারের চলমান সাম্প্রতিক দাঙ্গার আগুন যেন এদেশে না ছড়ায়, সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনসহ সকলের সজাগ থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি সকলের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করছি। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই, যে অধিকার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছিল না আমরা মনে করি এবং দাবি করি।
তিনি আরও বলেন, লোকজনের বসতঘর পুড়িয়ে দেয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ। ত্রিপুরাদের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের গতিপথের মধ্যে থেকে ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়াসহ উদ্বাস্তু ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। স্থানীয়দের জমি জবর দখল হচ্ছে, বৈধ অবৈধভাবে জোর করে দখল করে নেয়া হচ্ছে, এদেশ চলে আইনের ওপর ভিত্তি করে, অধিকারের ওপরে ভিত্তি করে। আপনাদের হক জমি জোর করে ছিনিয়ে কেড়ে নেয়ার অধিকার কারোর নেই। আগুনে সবকিছু পুড়ে গেলেও মন’তো পুড়ে যায়নি, মনটা যেহেতু আছে, নতুন করে কাগজপত্র কিনে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা সহসাই। প্রত্যেক নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, পানি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে করণীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর থানজামা লুসাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার, লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রূপায়ন দেব, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মৌজা হেডম্যান-কার্বারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পরিদর্শনকালে পার্বত্য উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র, ঘরের ঢেউটিনসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বিতরণ করেন। এর আগে তিন দিনের সফরে বৃহস্পতিবার রাতে উপদেষ্টা বান্দরবান পৌঁছান। শুক্রবার সকালে লামা উপজেলা সদর এবং সরই ইউনিয়নের অগ্নিসংযোগের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
প্রসঙ্গত: আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রাদের তথ্যমতে, লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের নতুন তংগোঝিরি পাড়ায় এসপি বাগান এলাকায় ত্রিপুরাদের ১৮ পরিবারের বসবাস করতেন দীর্ঘদিন ধরে। পাড়াটির নাম দেয়া হয়েছিল তংগোঝিরি নতুন পাড়া। বড়দিনের উৎসব উপলক্ষে গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পাড়াবাসী পার্শ্ববর্তী তংগোঝিরি পাড়া গির্জায় প্রার্থনায় যায়। এসময় পাড়ায় কেউ না থাকার সুযোগে দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগে পাড়ার ১৭টি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী গুংরামনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় পুলিশ জড়িত সন্দেজে অভিযুক্ত চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সরই পূর্ব বেতছড়া পাড়ার স্টিফেন ত্রিপুরা(৫০) ও মইশয় মে ত্রিপুরা (৪৮), টংঝিরি পাড়ার জোয়াটিং ত্রিপুরা (৫২) ও মো. ইব্রাহিম (৬৫)।