নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় ‘গ্রীন ভ্যালি প্লান্টেশন’ নামের একটি রাবার বাগান থেকে বড় আকারের ৬০টি মূল্যবান প্রজাতির গর্জন ও রাবার গাছ চুরি করে কেটে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ বাগানের কেয়ারটেকার সরোয়ার আলম চৌধুরী এসব গাছ বিক্রি করেন বলে অভিযোগ বাগান মালিকের। এ ঘটনায় কেয়ার টেকার সরোয়ার আলম চৌধুরী সহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন বাগান মালিকের ছেলে শামস মুহাম্মদ সালা উদ্দীন। মামলায় উল্লেখিত অন্য অভিযুক্তরা হলেন- বাগানের কেয়ারটেকার সরোয়ার আলম চৌধুরীর ভাই মো. সাজ্জাদ (২২) ও স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী ঝন্টু নাথ (৪০)। গাছ কেটে নেওয়ায় বাগান মালিকের প্রায় ১৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০০৭ সালের দিকে নুরুল হুদা নামের এক ব্যক্তি লামা উপজেলার ২৯৫নং লামা মৌজার খতিয়ান নং রাবার/৩ এর আন্দরে ২৫ একর জায়গা সরকার থেকে লীজ নেন। লীজকৃত জায়গায় রাবার ও গর্জন গাছের বাগান সৃজনসহ সেমিপাকা টিনসেড ও দোতলা বিশিষ্ট একটি বাংলো ঘর নির্মাণ করে ‘গ্রীণ ভ্যালি প্লান্টেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করে ্আসছেন। প্রতিষ্টানটি দেখাশুনার জন্য সরোয়ার আলম চৌধুরী প্রকাশ বাবু নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন বাগান মালিক। বাগানের জায়গা নিয়ে কোন বিরোধ সৃষ্টি হলে, তা পরিচালনার জন্য বিশ^াস করে মালিক নুরুল হুদা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে আমোক্তার নামা মূলে ক্ষমতা অর্পনও করেন সরোয়ার আলম চৌধুরীকে। শুধু তাই নয়, তৎসময় থেকে মালিক পক্ষ জায়গায় বাংলো ঘর নির্মাণ সহ বাগানের উন্নয়নে সরোয়ার আলম চৌধুরীকে বিভিন্ন মাধ্যমে দুই কোটি টাকার বেশি প্রদান করেন। কিন্তু সরোয়ার আলম চৌধুরী বিশ^াস ভঙ্গ করে বাগান মালিক নুরুল হুদার সরলতার সুযোগ নিয়ে অনিয়ম ও চুরি মত কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কেয়ারটেকার সরোয়ার আলম চৌধুরী একাধিকবার ওই বাগান থেকে গাছ কেটে বিক্রি করে দেন। এক পর্যায়ে অনিয়ম ও চুরির ঘটনা জানতে পেরে মালিক পক্ষ টাকার হিসাব চাইলে সরোয়ার আলম চৌধুরী বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে হিসাব দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সরোয়ার আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে আরও ১২-১৩জন পরিকল্পিতভাবে বাগান থেকে ৩৩-৩৪ বছর বয়সী ৪০টি গর্জন ও ২০টি রাবার গাছ কেটে স্থানীয় ঝন্টু নাথ নামের এক কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। এতে বাগান মালিকের প্রায় ১৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। বিক্রিত গাছ নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা মালিক পক্ষকে খবর দেন। এদিকে বহু অর্থ ও শ্রমের বিনিময়ে মেরাখোলা এলাকায় জায়গা লীজ নিরে নুরুল হুদা রাবার ও গর্জন বাগান সৃজন করে দীর্ঘ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন বলে জানান স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও তা আর হয়ে উঠেনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাঠ ব্যবসায়ী ঝন্টু নাথ জানান, আমি গাছগুলো সরোয়ার আলম চৌধুরীর কাছ থেকে কিনেছি। এত ঝামেলা হবে জানলে সরোয়ার আলম চৌধুরীর কাছ থেকে গাছগুলো কিনতাম না।
এদিকে রবিবার সকালে ভুক্তভোগী বাগান মালিকের ছেলে শামস মুহাম্মদ সালা উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে কেয়ার টেকার সরোয়ার আলম চৌধুরী একাধিবার বাগানের গাছ কেটে বিক্রিসহ নানা অনিয়ম ও চুরির মত কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। যার অহরহ প্রমাণ আছে। সম্প্রতি গাছ কেটে বিক্রি করার ঘটনায় নিষেধ করলে ‘ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি সহ বাগানে গেলে আমাকে, আমার পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে সুযোগ বুঝে প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেন সরোয়ার আলম চৌধুরী’।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সরোয়ার আলম চৌধুরী বলেন, আমি নুরুল হুদার বাগান থেকে কোন গাছ কেটে বিক্রি করিনি। নুরুল হুদার বাগানের পাশে আমারও সাড়ে ১০ একর জায়গা আছে। আমার ওই জায়গার বাগান থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছি। আর কাউকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
এ বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শামীম শেখ জানান, ‘গ্রীন ভ্যালি প্লান্টেশন’ থেকে চুরি করে গাছ বিক্রির ঘটনায় মালিক পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে কেয়ারটেকার সহ ১২-১৩ জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।