নুরুল করিম আরমান, লামা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই সারা দেশে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে ডামাঢোল। এ নির্বাচনে কে কোন পদে লড়বেন -এমন আলোচনা এখন বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সর্বত্র। এবার সারা দেশে ভোটগ্রহণ হবে চার ধাপে। কোন ধাপে, কোন উপজেলায় কবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে তারও একটি তালিকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই অনুযায়ী জেলার বৃহত্তর লামা উপজেলায় মে মাসের দ্বিতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে এ তারিখ ঘোষণার পর পর নির্বাচনকে ঘিরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা গেছে। এদের মধ্যে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস, কেউবা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে গণসংযোগ, আবার আড্ডা-আলোচনা সহ নানান পরিবেশে প্রার্থীতার জানান দিয়ে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে নিচ্ছেন। শুধু উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থক এক সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়া অন্য দল থেকে এখন পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) কিংবা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন প্রার্থীর নাম শুনা যায়নি।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে মনোনয়ন ও প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ২ জন সম্ভাব্য প্রার্থী জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত ও দলীয় পরিচয় তুলে ধরছেন। এলাকায় ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
যে দুইজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে অংশ নিবেন বলে নিশ্চিত করেছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তে এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সম্মতি দিলে উপজেলা বিএনপি’র মো. জাকের হোসেন মজুমদার চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন বলে শুনা যাচ্ছে। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আমির হোসেন মজুমদারের বড় ছেলে। দলীয়ভাবে উপজেলা বিএনপি’র সহ -সভাপতিও তিনি।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিল্কি রানী দাশ এর কথা শুনা যাচ্ছে। তিনি উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি। গত নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্ধী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব লিটন দাশের সহধর্মিনী তিনি। আরেক প্রার্থী হলেন পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শীলেরতুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বৈশালী বড়–য়া। তার স্বামী উজ্জল বড়ুয়া ঔষধ ব্যবসায়ী ও পৌর আওয়মী লীগের সহ-সভাপতি। কক্সবাজার জেলার উখিয়া কুতুপালং গ্রামের সমভ্রান্ত জমিদার পরিবারের দ্বিতীয় মেয়ে বৈশালী বড়ুয়া। তার পিতা অরবিন্দ বড়ুয়া উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আরেক প্রার্থী পৌর শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমা বেগম। তিনি উপজেলার ইয়াংছামুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজেম উদ্দিনের সহ-ধর্মিনীও। অপরদিকে উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী উজ¦ল কান্তি দাশের সহ-ধর্মিনী শিল্পী দাশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করবেন বলে শুনা যাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশের মেয়ে তিনি। এছাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উপজেলা শাখার সভাপতি শারাবান তহুরাও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহেদ উদ্দিন আবারও নির্বাচন করবেন বলে শুনা গেছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম মো. আবু তাহের মিয়ার ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি। এ পদে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোহাম্মদ ইসমাইল এর ছোট ভাই নাছির উ্িদ্দনের নামও সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় উঠে এসেছে। উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন নাছির উদ্দিন। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী মিয়ার ছেলে আব্বাস উদ্দিন সেলিম। উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকও তিনি। এছাড়া পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর’র ছেলে ওসমান গনি শিমুলও নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সমন্বয়ক তিনি।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তফশিল ঘোষণা না হলেও লামা উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনি হাওয়া বইতে শুরু করেছে। প্রার্থী, প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের গায়েও লেগেছে নির্বাচনি হাওয়া। তবে ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। পৌরসভা এলাকার ভোটার মোহাম্মদ আলমগীর, লামা সদর ইউনিয়নের ভোটার আনোয়ারা বেগম, ফাইতং ইউনিয়নের হামিদা বেগম, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ভোটার অনারাম ত্রিপুরার মতে, নির্বাচন এলেই কেবল নেতাদের পা পড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। নির্বাচন চলে গেলে এসব নেতারা আমাদের আর খোঁজখবর রাখে না। তবে এবারের নির্বাচন প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের নির্বাচন হবে বলে জানান তারা। কারণ দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হলে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভোট দিতে পারবেন বলেও জানান তারা।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী না থাকায় উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামালকেই পুণরায় দলীয়ভাবে মনোনীত করা হয়। তবে পুরুষ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. আমির হোসেন জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পাতানো এ নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করবেনা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বিএনপি। কাজেই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কোন নেতাকর্মী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে লামা উপজেলা পরিষদ গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮২ হাজার ২১৩ জন। তিনি আরও বলেন, এবার চার ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে লামা উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।