নিজস্ব প্রতিবেদক, লামা
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় সোলতানা ইয়াসমিন নামের এক সংকটাপন্ন প্রসূতিকে জরুরি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে শঙ্কামুক্ত করলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মারমা। জনবল সংকট আর যন্ত্রপাতির অভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল অপারেশন থিয়েটার। এ কর্মকর্তার একান্ত প্রচেষ্টায় অপারেশন থিয়েটার চালুর মাধ্যমে উপজেলার দরিদ্র পরিবারগুলো বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর সুযোগ পেলেন। এতে রোগীর স্বজনদের একদিকে যেমন বাড়তি টাকা লাগবে না, তেমনি জেলা সদরে কিংবা পাশের কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে যাওয়া-আসার ভোগান্তি থেকেও রেহাই মিলবে। এর মধ্যে ভিন্নতা পেয়েছে প্রসূতি সেবা। প্রতি মাসে গড়ে এই কমপ্লেক্স থেকে ৫০-৬০ জন মা স্বাভাবিক প্রসব গ্রহণসহ প্রতিদিন শত শত মানুষ নানান সেবা গ্রহণ করছেন। এ সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার বিকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়ার বাসিন্দা সোলতানা ইয়াসমিন (২৬)। তাৎক্ষণিক দায়িত্বরত চিকিৎসক ও মিডওয়াইফ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখেন, তার নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই প্রসূতির আত্মীয় স্বজনকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন তারা। একদিন পর সোমবার প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয় ওই প্রসূতির। কিন্তু শারীরিক সমস্যা থাকার কারণে প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মারম নিজেই প্রসূতির সিজার অপারেশনের দ্রæত ব্যবস্থা করেন। পরে সিজারের মাধ্যমে প্রসূতির দুটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মারমার নেতৃত্বে সিজারিয়ান অপারেশনে সহযোগিতা করেন অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. নূর মুহাম্মদ ও মেডিকেল অফিসার ডা. জেসমিন আকতার এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স ইখেনু। বিগত সময়ে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চললেও এতদিন অধিকাংশ রোগিকে (সিজার প্রযোজ্য) জেলা সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সরকারি কিংবা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক থেকে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়েছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অনেক দরিদ্র পরিবারকে ধারদেনাও করতে হয়।
ডা.এখিং মারমারসহ অন্য চিকিৎসকদের ভূয়ষী প্রশংসা করে প্রসূতি সোলতানা ইয়াসমিনের স্বামী আলী হোসেন বলেন, স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না বলে জানান। এরপর স্ত্রী’র অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করি। পরে ডা. এখিং মারমা তাৎক্ষণিকভাবে সিজারের ব্যবস্থা করেন। প্রথমে টেনশন কাজ করলেও সুষ্ঠুভাবে ও বিনা খরচে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। বর্তমানে আমার স্ত্রী ও দুই নবজাতক সুস্থ আছেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এখিং মারমা জানান, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানে এখানে কর্মরত সকল চিকিৎসক-সেবিকাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। এর মধ্যে ভিন্নতা পেয়েছে প্রসূতি সেবা। প্রতি মাসে গড়ে এই কমপ্লেক্স থেকে ৫০-৬০ জন মা স্বাভাবিক প্রসব গ্রহণ করছেন। এলাকার গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা যাতে বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে না হয় এবং ভোগান্তির শিকার হতে না হয়, সেজন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি সেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি খরচে সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব চেষ্টা করে যাচ্ছি। ডেলিভারি করতে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের ব্যবস্থাপনা রয়েছে। অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তায় কোন প্রসূতির অত্যাবশ্যকীয় সিজারের প্রয়োজন হলে নিজেই সিজার অপারেশন করছি। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ডা. এখিং মারমা।
প্রসঙ্গত, লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২০১৭ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল পদায়ন হয়নি। হাসপাতালটিতে প্রচুর চিকিৎসক, নার্স এবং জনবল সংকট রয়েছে। লামা উপজেলাসহ আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার কিছু অংশ মিলে প্রায় তিন লাখের অধিক মানুষের একমাত্র সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।