—ঞ্যোহ্লা মং
পরীক্ষা কাছাকাছি সময়ে ঢাকা থেকে এক বন্ধু রাজশাহী বেড়াতে আসে। তাকে নিয়ে যাবো সারদা পুলিশ একাডেমিতে। বিনোদনপুর গেইটে এক রিকশা এমনভাবে সামনে এসে পড়লো নিজেকে বাঁচাতে হ্যান্ডেলটা ধরে থামাতে হলো। হাতের পাতা ফেঁটে গিয়ে আঘাত পাই। পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর এগুতে পারিনি। কারণ পরীক্ষা মানে ৪–৫টি প্রশ্নের উত্তর ৪ ঘন্টা ধরে লিখতে হবে। হাত আমায় সে শক্তি যোগান দিতে না পারায় আর এগুতে পারিনি। মন খারাপ নিয়ে রুমে বসে থাকতাম। পরের ব্যাচের সুমনের সাথে আমার অনেক আগে থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রায় আমরা ঘুরে বেড়াতাম। তার বাসায় বেড়ানোরও ইতিহাস ছিল। সে আমাকে উদ্ধার করে তার ব্যাচমেটদের সাথে মিশতে নিয়ে যেতো। এভাবে দেখতে দেখতে তিন–চার মাস পরে পরীক্ষা দিয়ে নিজের হীনমন্যতা ঠিক করে নিয়েছিলাম। সে থেকে সুমনের সাথে আমার সম্পর্ক অন্য লেভেলের। সুমন এখন অনেক বড় স্টার। যে অন্যকে সহায়তা করে, সেই তো বড় হয়।
সুমনের হাত ধরে লেবু, আপেল, ডালিম, আকাশ, সাদেক, হারুনদের সাথে আমার সম্পর্ক বন্ধুত্বে রূপ পায়। মজার ব্যাপার হলো, আপেলদের ব্যাচের সাথে পড়ার সুযোগ না পেলে আমি নিজেও জানতাম না যে ৯৪–৯৫ ব্যাচের অনেকে আমার ন্যায় নানা কারণে ছিটকে, পরের ব্যাচের সাথে পড়ালেখা শেষ করেছে। বিদ্যুৎ, আজম, রাসু, শরীফ, শহীদ, বাদল সহ অনেকে আমরা পরের ব্যাচের সাথে ক্লাশ করেছি। এই খবর আমাদের ৯৪–৯৫ ব্যাচের অনেকেই হয়তো জানেও না।
৯৪–৯৫ সেশনের অনেকের সাথে যেমন আমার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, তেমনি ৯৫–৯৬ এর অনেকের সাথেও আমার ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের প্রায় সকলে আমায় নাম ধরেই ডাকে। আমিও তাদের অনেককে বন্ধু সম্বোধন করে কথা বলি। ৯৪–৯৫ সেশনের একটি প্লাটফর্ম আছে। তাদের উদ্যোগে একটি পুনর্মিলনী হয়েছিল। আমারও যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু শেষ মুহুর্তে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম বলে যেতে পারিনি। সহপাঠী কিছু বন্ধুর সাথে রাজশাহী কিভাবে যাবো তাও ঠিক করে রেখেছিলাম। শেষ মেষ কিছুই হয়নি। প্রায় কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ৯৫–৯৬ সেশনেরও একটি প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল। আমাকে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। দুটি প্রোগ্রামই নিকটতম সময়ের মধ্যে হওয়ায় ৯৫–৯৬ সেশনের উদ্যোগী বন্ধুকে আমায় ৯৪–৯৫ সেশনের সাথে যাওয়ার অনুমতি দিতে বলে রেখেছিলাম। যতদূর জেনেছি সেবার ৯৫–৯৬রা আয়োজন করতে পারেনি। ৯৪–৯৫রা মিলিত হতে পেরে খুশিতে বন্ধুরা ফেসবুকে অনেকগুলো পোস্ট করেছিল। এক বন্ধুর পোস্টের মন্তব্য ঘরে লিখেছিলাম “কত বছর পর ক্যাম্পাসে গেলে, সেখানে শুধু নাচ–গান আর শব্দ দূষণ করে র্যালি করতে গিয়েছো বলে মনে হয়েছে। আমরা সেখানে শিখতেও যাইনি, শেখাতেও যাইনি। ছাত্রজীবনে ক্যাম্পাসে যা করতাম তাই করছি। ছোট ভাইবোনদের কিছু শেখানোর কোন কার্যক্রম না দেখে আমি খুশি হতে পারলাম না। বরং না যেতে পেয়ে ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে”।
৯৫–৯৬ সেশনের বন্ধুরা এবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পুনর্মিলনী আয়োজন করেছে। আমরা যারা ঢাকায় থাকি একটা টুরিস্ট বাসে গাদাগাদি করে গিয়েছি। পথে যারা সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল, তাদেরকেও কিছু সময়ের জন্য বসার সুযোগ করে দিয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছি। আয়োজক বন্ধুরা পথে খাওয়া–দাওয়ারও আয়োজন রেখেছিল। লাড্ডু–কেক–চকলেট–কলা কত কি!
পথে এক বন্ধু বাসে উঠছে তো, আমরা এমনি বন্ধুটির নাম ধরে ডাকাডাকি করেছি। লেবুকে আমাদের ডাকাডাকিতে মন না দিয়ে সকল বন্ধুকে কিভাবে সঠিক জায়গা থেকে বাসে উঠানো যায় সেই কাজেই বেশি মন দিতে দেখেছি। বন্ধুদের একত্রিত করা চারটি–খানি কাজ নয়! কিছু মানুষকে সময়, শ্রম দিতে হয়। মনোযোগ বিনিয়োগ করতে হয়। মনোযোগ বিনিয়োগের পাশাপাশি আগ্রহ–ভালোবাসা আর রাগ ক্ষোভ দমিয়ে রাখার গুণ যুক্ত করতে হয়।
পথে দেওয়া নাস্তা কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে খাচ্ছিলাম আর এমন সময় বলে উঠলাম, “বাসে কেউ ময়লা করলে, তার সাথে সারাদিন কোন কথা বলবো না”। কেউ গুরুত্ব দিলো, কেউ দিলো না। খেতে খেতে বললাম, “আমাদের স্যারদের কেউ কি আসছেন?” কেউ একজন উত্তর দিলো, “কাউকে বলা হয়নি। তবে অমুখ স্যারকে বলতে পারতাম”। আমি বলে উঠলাম, “যেহেতু কাউকে বলা হয়নি, তাকে না বলে ভালো করেছো। তাকে আমার বিশেষ পছন্দ নয়”। তখন অনেকে বলে উঠলো, “স্যারকে এভাবে বলতে নেই”। আমি আবার বললাম, “ক্যাম্পাসে তার নামে কিছু কি শুননি? তার নামে আমিতো অনেক শুনেছি”।
প্রায় সকলে যুক্ত হয়ে বলে উঠলো, “স্যারদের এভাবে বলতে নেই”। সহপাঠীদের মাঝে স্যারদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখে খুব একটা অবাক হইনি। আমাদের সমাজটাই এমনি। স্যার ভালো হউক আর খারাপ, আমরা কেউ প্রকাশ্যে বদনাম করি না। বদনাম না করার সংস্কৃতিও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করি। যে স্যাররা আমাদের পড়ানোর নামে বেতন নেন, তাদের ভালো মন্দ বিচার করার সুযোগ থাকা উচিত। আমাদের সমাজে বিনে পয়সায়, কম পয়সায়, সেরা মেধাবীরা সৎ পথে শিক্ষকতা করতেন বলে সমাজে শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ রয়ে গেছে। এখন সে মানের, সে মেধাবী শিক্ষক তো সমাজে নেই। মেধাবীদের শিক্ষকতায় ফেরানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগও নেই [দেখুন: ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী’ র সাক্ষাৎকার, প্রথম আলো, ১৮ জুন, ২৩]। ঐতিহাসিকভাবে শিক্ষকদের প্রতি সমাজের মূল্যবোধ সমাজ ধারণ করলেও, শিক্ষক সমাজ তো তা ধারণ করেননি। তারা এখন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জ্ঞানচর্চার খবর না হয়ে, প্রতিনিয়ত নিয়োগ বাণিজ্যের খবরের শিরোনাম হয়ে থাকেন। তারপরও বন্ধুরা আমাকে নিরুৎসাহিত করলো।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা বিটিভির কল্যাণে দেখেছি। স্বশরীরে কোনোদিন আসা হয়নি। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই কয়েকজন বন্ধুর দেখা পেলাম। অনেকে ক্যাম্পাসে এসে অবস্থান করছে। শিক্ষক ইকবাল আগে থেকে সব ঠিক করে রেখেছে। এখানে সে শুধু একা নয়। তার প্রতিষ্ঠানে কিছু কর্মীদেরও এমনভাবে করে রেখেছে, সারাদিনে আমার তাদের কাউকে অফিস কর্মচারী বলে মনে হয়নি। ইকবাল আমাদের জন্য পুরো ক্যাম্পাসটা ভালোবাসা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। আমরা পৌঁছেই সকলে ক্যান্টিনে বসে ব্র্যাঞ্চ (ব্রেকফাস্ট + লাঞ্চ = ব্র্যাঞ্চ) করেছি। ক্যান্টিনে, কফি শপে গেলে যা লাগে খাও আর খাও, কিছু দিতে হবে না।
আমাদের কারো কথা শেষ হয় না। কে কি জিজ্ঞেস করছে বলা মুশকিল। তবে প্রথম দেখাতে সবারই একটি কমন প্রশ্ন, কি করছিস? কয় ছেলে মেয়ে? ২২–২৩ বছর পর দেখা, সবাই জিজ্ঞেস করে, “কি করছিস?” আমি মনে মনে বললাম, “বন্ধু এখন কি আর এই সব জিজ্ঞেস করার সময়? এখনতো আমাদের জিজ্ঞেস করা দরকার, কি করেছিস? সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সমাজের কি ভূমিকা রেখেছিস? সমাজের না হোক পরিবারের জন্য কি ভূমিকা রেখেছিস?” তবে আমার কিছু দেশ ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে, পরিচিত অপরিচিত কাউকে, কি করছি? কি চাকরি করছি, এমন কেউ জিজ্ঞেস করেছে বলে মনে পড়ে না।
নাস্তা খাওয়া হলো, পুরো ক্যাম্পাস ঘুরাঘুরি হলো, খেলাধুলা চললো। খেলাধুলা চলার সময়ে বিস্কুট, চকলেট বিতরণ চললো। লক্ষ্য করলাম, আমাদের হাতে যা এসেছে সবই সাজানো ক্যাম্পাসে ছুড়ে ফেলেছি। হাতের নাগালেই ডাস্টবিন ছিল, কিন্তু ব্যবহারের অভ্যস্থ হতে না দেখে একটু হতাশ হয়েছি। আমি দেখে থাকতে না পেরে নিজেই একটা ডাস্টবিন নিয়ে চকলেটের খোসা, খালি পানির বোতল কুড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলার বৃথা চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা ছাত্রছাত্রী হলেও আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ব্যর্জ নিক্ষেপ করতে শিখেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে বিশ্ববিদ্যালয় মানের, বিশ্বমানের নয়, তার একটি বড় ইনডিকেটর বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা করা ছাত্রছাত্রীরা যদি ডাস্টবিন ব্যবহার করতে না শেখে, রাস্তার ড্রাইভার, রিকশাওয়ালারা কি করবেন? তারা কাদের দেখে শিখবেন? তাই আমাদের দেশটা ব্যর্জে ঢাকা। পথে হাঁটতে গিয়ে নাক বন্ধ করে হাঁটবো, তারপরও হাতে যা আসে ব্যবহার শেষে নিক্ষেপ করবো। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চেহারাও একই রকম। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পরিবেশ বান্ধব হতে শেখায় না [আরো দেখুন: ঞ্যোহ্লা মং, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিচ্ছন্নতা’, সমকাল, ২৪ ডিসেম্বর, ১৭]। শেখায় শিক্ষকটির পড়ানোর মান নিম্নমানের হলেও যেন বদনাম না করি।
দুপুরের খাবার খেতে গিয়েও চমকের কমতি রাখেনি আয়োজক বন্ধুরা। আমার তেল মশলা প্রীতি কম বলে, যাওয়ার আগে লেবুকে শর্ত দিয়েছিলাম, সাদা ভাতের। লেবুরা আমার জন্য শুধু সাদা ভাত নয়, সাথে আলু ভর্তা, ভাজি ইত্যাদি করে রেখেছিল। যা আমাকে ঋণী করেছে।
খাওয়া–দাওয়া পর্বে ভালো লাগার দৃশ্য হলো সবাই সবাইয়ের জন্য ওয়েটারগিরি করেছে। কার কি লাগবে একে অপরকে নিয়ে দিয়েছে। খাওয়া দাওয়া পর্বে অনেকে রাজশাহী আম ভর্তা বানিয়ে খেয়েছে বলেও শুনেছি, তবে দেখিনি। দেখলেও খেতাম না হয়তো। কারণ আমার তেল মশলা, সসের প্রীতি কম।
খাওয়া দাওয়া শেষে বড় চমক হলো বন্ধুদের ছবি দিয়ে শর্মীর স্মৃতি চারণমূলক এক সুন্দর উপস্থাপনা। আমাদের সন্তানরা যে যা পারে গান–কবিতা করেছে। বন্ধুরাও যার যার দক্ষতা দেখিয়েছে। স্মৃতিচারণ শুনতে গিয়ে মনে হয়েছে এই পর্বটি লম্বা হলে ভালো হতো। তথ্যগুলো ছিল মজার এবং নিজেদেরকে ফিরে দেখার এক সুবর্ণ সুযোগ।
গান–বাজনা স্মৃতি চারণ শেষে সবাইকে, সকলের সন্তানকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বন্ধুরাও সকলে স্মৃতিস্মারকসহ বন্ধুদের লেখা মহামূল্যবান দুটি বই উপহার পেয়েছে। বন্ধুদের একজন সকল বন্ধুদের জন্য পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছে। আরেক বন্ধু সহপাঠীনিদের দিয়েছে শাড়ি। আবার পরিবারের সদস্যরাও শাড়ি কিংবা পায়জামা উপহার পেয়েছে। তারপরও উপহার পাওয়া যেন শেষ হয় না। লটারি করে বন্ধুদের মাঝে সুন্দর সুন্দর আরো নানা পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। এখানেও শেষ হলো না। রবিন ইলেকট্রনিকস এর সৌজন্যে একটি টেলিভিশন লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। শুধু পুরস্কার বিতরণ করতে গিয়েই যেন বিকেলটা কেটে গেলো। সবশেষে ইকবাল সকলের উদ্দেশ্যে ফোরাম গঠনের গুরুত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে শেষ হলো হলরুম নির্ভর পর্ব। ইকবালের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বন্ধুরা মিলে ভালো কিছু করার আহবান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিষয় ভিত্তিক, সেশনভিত্তিক হাজারো ফোরাম রয়েছে। ফোরামগুলো যেন শুধু বছরে একবার পিকনিক করার জন্যই গঠন করা হয়ে থাকে। আমাদের প্রস্তাবিত ফোরামটি যেন সেই গন্ডি পেরিয়ে অনেকদূর স্বপ্ন দেখে, চেষ্টা করে সে প্রত্যাশা করবো। ফোরামগুলো যেন স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিভাগের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। ভিসিদের স্বেচ্ছাচারিতা দেখলে যেন প্রতিবাদ করে, আওয়াজ করে। বিবৃতি দিয়ে যেন বলে, “স্যার থামেন, আমরা লজ্জা পাচ্ছি”। [ফোরাম নিয়ে আমার কিছু চিন্তা পড়ে দেখতে পারেন, ঞ্যোহ্লা মং, ‘পাহাড়ে বিভাজন আছে, মিলন নেই’, সমকাল, অনলাইন পোর্টাল, ৩১ জানু, ২৩]
আমরা খালি হাতে গিয়ে, ফিরলাম ক্রেস্ট বই আর মজার মজার পুরস্কার নিয়ে। ক্যাম্পাসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগকে ‘লিপিস্টক ডিপার্টমেন্ট’ বলা হতো [দেখুন: ড. ওয়ারদাতুল আকমাম, ‘আমার শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল কাদির ভূঁইয়া’, আবদুল কাদির ভূঁইয়া স্মারকগ্রন্থ পৃষ্ঠা ৬৯, ২০২১] শিক্ষকরা আমাদেরকে ক্যাম্পাসে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী হিসেবে গর্ব করতে অনুপ্রাণিত করতেন। আমার দুই ব্যাচের অনেকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আমাদের বন্ধুদের অধিকাংশই আজ স্ব স্ব চিন্তা, মতাদর্শ চর্চায় বেশি ব্যস্ত। এবারের পুনর্মিলনীতেও অনেককে দেখে নিজের সুখ শান্তি কামনায় সময় আত্ননিয়োগ করেছে বলে মনে হয়েছে।
আজকাল নিজেকে অনেক জায়গায় গেলে বেমানান মনে হয়। কারণ আমার নিজের সুখ, কল্যাণের চেয়ে মানুষ, সমাজ, পৃথিবী, পরিবেশ নিয়ে ভাবতে বেশি ভালো লাগে। সমাজে মিলেমিশে থাকার প্রয়োজনে যেটুকু প্রথা, বিশ^াসগুলোকে না করলে নয়, তাই করি; কিন্তু এই নিয়ে ব্যস্ত বা ডুবে থাকার চিন্তা করতে পারিনি।
সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে, সমাজের ছাত্র, সমাজের ডাক্তার, সমাজের নানা রোগ ব্যাধি নিয়ে তারা চিন্তা করবে, গবেষণা করবে। কথা বলবে। সে না হয়ে যদি নিজের আগামীর সুখের আশায় ব্যস্ত থাকি সুন্দর বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, স্বপ্নের বাংলাদেশ, উন্নত বিশ্বের কাতারে বাংলাদেশকে নিতে দীর্ঘতর সময়ের প্রয়োজন হবে কিনা চিন্তা করি।
বিশ্ববিদ্যালয় তার একটি বিভাগ খোলার পিছনে নিশ্চয়ই কিছু যুক্তি থাকবে। আমাদের বিভাগের কী তার যুক্তি, কী তার ভিশন জানি না। এই নিয়ে বিভাগের কোন চিন্তা আছে কিনা তাও জানি না। বিভাগ তার বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা কী করছেন জানতে, সে নিয়ে কোন গবেষণা আছে কিনা জানি না। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ তার নিজের কোন সীমাবদ্ধতা আছে কিনা জানার চেষ্টা হয়েছে কিনা তাও জানি না। তবে, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকা দরকার। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের থেকে সমাজ, রাস্ট্র, রাজনীতিবিদদেরও প্রত্যাশা অনেক। তাই খেয়াল করলে দেখবেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হওয়ার সুযোগ পান। বিভাগের ছাত্র–শিক্ষকদের প্রতি সমাজের প্রত্যাশাটুকু আমরা ছাত্র–শিক্ষকরা উপলব্ধি করতে পারছি কিনা জানি না।
দেশী–বিদেশী ফুলমূলের সাথে পড়ালেখা করেছি, কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রথম আপেল গাছের দেখা পেয়েছি, জেনেভা শহরে ২০১১ সালে। কয়েকটি আপেল গাছের পাশে গিয়ে অনেক বার দাঁড়িয়েছি, পেড়ে খাওয়ার চিন্তা করেছি; কিন্তু নতুন শহরে নিজেও নতুন বলে সে সাহস করতে পারিনি। তবে ১৫ সালে, কড়া রোদে আপেল বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আপেল বাগানে কাজ করার অভিজ্ঞতা পেতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেককে অনুরোধ করে আপেল বাগানে কয়েকদিন কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আপেল বাগানে কাজ করা সে এক মজার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পরিশ্রমের আর কিছুটা ঝুঁকিরও। তবে আগামীতে আবারও বন্ধু আপেল, লেবুদের ডাক পেতে চাই। সাদেক, হান্নানসহ অনেকের দেখা, মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ আর ফেসবুকে যুক্ত হতে পেরে আমি দারুণ আনন্দিত। আমার পরিবারের সদস্যরাও এখন অনেকের নাম বলতে পারে। বাবার মৃত্যুতে নতুন করে দেখা পাওয়া অনেক বন্ধুর কাছ থেকে সমবেদনার বার্তা পেয়েছি। এ সবই সম্ভব হয়েছে উদ্যোগী বন্ধুদের কল্যাণে। শর্মী, ইকবাল, আপেল লেবুরা মনে, চিন্তায় অনেক বড়। তাদের ক্যাম্পাসে যেমনটি দেখেছি, ২৩ বছরের ব্যবধানে নানা পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবেও নিজেদেরকে খুব বেশি পরিবর্তন করেনি। তাই তারা ব্যাচমেটদের সকলের কাছে এক একজন প্রিয়মুখ।
ঞ্যোহ্লা মং, কলাম লেখক, ইমেইল: nyohlamong7@gmail.com