মিশু মল্লিক
পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীরা বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানান আয়োজন শুরু করেছে বেশ কিছুদিন আগ থেকেই। বৈসাবি উৎসবের সেই আনন্দ আয়োজনের অংশ হিসেবে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলায় মেতেছেন পাহাড়ের অধিবাসীরা। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাঙামাটির চিং হ্লা মারী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশখরম, নাদেং খারা, ঘিলা ও গদু খেলা। পাশাপাশি বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বলি খেলা। এসব খেলায় রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পাশ্ববর্তী জেলা থেকেও প্রতিযোগিরা অংশ নেন।
মঙ্গলবার সকালে ঐতিহ্যবাহী বাঁশখরম, নাদেং খারা, ঘিলা ও গদু খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসব খেলায় পুরুষ ও মহিলারা একক ও দলগত ভাবে অংশ নেন। গদু অর্থাৎ কাবাডি খেলা। গদু খেলার পুরুষ ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে প্রথম হয় অতুল চাকমার নেতৃত্বে তার দল এবং দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সর্বজিৎ চাকমা ও তার দল। মহিলা ক্যাটাগরিতে প্রথম হয় অরনিকা চাকমার নেতৃত্বে তার দল ও দ্বিতীয় হয় আলপনা চাকমার ও তার দল। সকল খেলায় বিজয়ীদের হাতে নগদ অর্থ পুরষ্কার তুলে দেন আয়োজক কমিটির সদস্যরা।
বিকেলে পাহাড়ি নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা । নৃত্য শেষেই শুরু হয় অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ঐতিহ্যবাহী বলি খেলা। দুপুরের পর থেকেই রাঙামাটি চিং হ্লা মারী স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে। বিকেল ৪টার কিছু পরেই শুরু হয় বলি খেলা। প্রথমে ছোটদের বলি খেলা শুরু হয়। এতে অংশ নেয় ছোট বলিরা। ছোটদের প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হয় বড় বলি দের শক্তি প্রদর্শনের লড়াই। পুরো স্টেডিয়াম তখন কানায় কানায় পূর্ণ হয় উঠে। হাততালি আর দর্শকদের উচ্ছাস প্রতিযোগিদের আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। প্রথম বড় বলি, দ্বিতীয় বড় বলি, তৃতীয় বড় বলি, সাধারণ বলি, ও সাধারণ ছোট বলি মোট পাচ ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় বড় বলি ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা। প্রায় আধা ঘন্টা শক্তি ও সাহসের লড়াই শেষে এতে চ্যাম্পিয়ন হন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা ও রানার্স আপ হন রমেল চাকমা। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপকে নগদ ১০ হাজার ও ৬ হাজার টাকা পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২৩ উদযাপন কমিটির খেলাধুলা উপ-কমিটির আহবায়ক শুক্র কুমার চাকমা বলেন, মূলত বৈসাবির আনন্দকে সবার মাঝে ভাগাভাগি করে নিতেই প্রতিবছর আমরা এই খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। এই খেলাগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এসব খেলাধুলার মাধ্যমে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যগুলো দেশ তথা বিশ^বাসীর সামনে তুলে ধরা সম্ভব হয়।
বলি খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সৃজন চাকমা বলেন, আমরা কয়েকজন প্রতিযোগি প্রতিবছর এই খেলায় অংশ নেয়ার জন্য খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটিতে আসি। এটা আমাদের কাছে যতটা না প্রতিযোগিতা তার চেয়ে বেশি বিজুর আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার একটি উপলক্ষ্য।
বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রান-২০২৩ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, প্রতিবছরই বিঝু উপলক্ষে আমরা এই খেলাধুলার আয়োজন করে থাকি। এটি আমাদের কাছে একটি নির্মল বিনোদন। পাশাপাশি এই খেলাধুলার কারণে পাহাড়ের অধিবাসীদের ঐতিহ্য তুলে ধরার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়। আমরা চেষ্টা করবো এই ধারাবাহিকতা যাতে আমরা রক্ষা করতে পারি।
বুধবার ১২ এপ্রিল ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার তিনদিন ব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা শুরু করবেন পার্বত্যবাসীরা।
শক্তি ও সাহসের লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা
Previous Articleবৃষ কেতু আর শাওয়ালকে সংবর্ধনা দিলো বাঘাইছড়ি স্বেচ্ছাসেবকলীগ
এই বিভাগের আরও সংবাদ
সম্পাদকঃ ফজলে এলাহী
নির্বাহী সম্পাদকঃ হেফাজত সবুজ
প্রধান কার্যালয়
পৌর মার্কেট, দ্বিতীয় তলা, পৌরসভা এলাকা, রাঙামাটি-৪৫০০
ফোন : ০১৭১৮৫৪৭৮৭৮, ০১৬১৮৫৪৭৮৭৮।
ইমেইল : pahar24news@gmail.com
পাহাড়ের সংবাদ
আমাদের সম্পর্কে
© 2025 All Rights Reserved pahar24.com. Developed by MicroWeb Technology.