জিয়াউল জিয়া
তীব্র দাবদাহে যেখানে একটু ছায়ার জন্য হাহাকার, সেখানে একটি বটগাছ বাঁচাতে মানুষের অন্যরকম সংগ্রাম। জানা গেছে, বটগাছ ও আশেপাশের জায়গাটি স¤প্রতি জেলা তথ্য অফিসের স্থায়ী ভবনের জন্য প্রাস্তাবিত ভূমিটি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ট্রাইবাল আদাম বটতলা এলাকায়। একটি পরিবারের কাছ থেকে জায়গাটি কেনার পর বটগাছটি কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে মুখোমুখি অবস্থান স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাঙামাটি জেলা শহরের ট্রাইবাল আদাম বটগাছ তলার সেই শতবর্ষী বটবৃক্ষ বাঁচাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছটি কাটা হলে মানুষ ছায়া খোঁজার আশ্রয় হারাবে। যদিও অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয়দের আপত্তি না থাকলেও বটগাছটি কাটতে দেবেন না স্থানীয়রা।
ট্রাইবাল আদাম বটগাছ তলায় যান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ আলীসহ অনান্যরা।
পূর্ব ট্রাইবেল আদাম এলাকায় সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী একটি বটগাছ। যার শীতল ছায়ায় প্রতিদিন প্রাণ জুড়ান শত শত মানুষ। সেই গাছটি কাটা হবে শুনে সোম ও মঙ্গলবার তাই গাছটি ঘিরে অবস্থান নেন নানা বয়সী মানুষ।
গাছটি কাটার জন্য নিয়ে আসা হয় শ্রমিক। আসেন পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে এলাকাবাসীর বাধার মুখে প্রথমদফায় তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। স্থানীয়দের আকুতি, চলমান তাপপ্রবাহে সবাই যেখানে বৃক্ষরোপনে জোর দিচ্ছে সেখানে ছায়াদানকারী একটি গাছ বৃক্ষ কেটে ফেলা হবে চরম অমানবিক।
স্থানীয় ট্রাইবাল আদাম এলাকার ৯২ বছর বয়সী পারুল রানী চাকমা জানান, আমি বট গাছটি এই এলাকার মানুষের নানা কর্মকান্ডের সাথে মিশে আছে। তীব্র গরমে একটু শান্তির আশায় এলাকার সবাই এই গাছের নিচে অবস্থান নেয়। এই এলাকার দোকানদার সহ আশে পাশের এলাকা শীতল রাখে। এই গাছের ফল খেয়ে হাজার হাজার পাখি বেচে আছে এবং কয়েক হাজার পশুপাখির বসবাস এই গাছে। কোনভাবেই এই কাটতে দেয়া হবে না।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা দেবানন চাকমা বলেন, ভবন নির্মাণে আমাদের কোন সমস্যা নেই। বিধিমালায় বলা আছে, সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যেকোনো জমিতে কোনো গাছ থাকলেই সে তা নিজের ইচ্ছেমতো কাটতে পারে না। তাই আমাদের একটাই দাবি কোন ভাবেই এই গাছ কাটা যাবে না।
গাছটি কাটার বিষয়ে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই ব্যক্তি সাবেক যুগ্ম সচিব প্রিয়দর্শী খীসার দাবি, বটবৃক্ষটি নিজেদের দাবি করে সেটি কাটার অনুমতির প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন জায়গা যার যে চাইলে তার ইচ্ছেতেই গাছ কাটতে পারবেন। আমার জায়গা অমি জেলা তথ্য অফিসের স্থায়ী ভবনের জন্য বিক্রি করেছি। তারা জানিয়েছেন গাছটির জন্য ভবনের সৌন্দর্য থাকবে না। তাই আমি গাছটি কাটার উদ্যোগ নেই। কিন্তু স্থানীয়রা না বুঝেই কাজে বাধা দিচ্ছি।
জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম উপস্থিত থাকলেও এই বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয় নি।