মিশু মল্লিক
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাঙামাটির বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে রাঙামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এবং পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বিপিএম (বার)। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সহকারী পুলিশ সুপার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেবৃন্দসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসনপুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে তারা ভাষা শহীদদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই জাতীয় সংসদের সংরক্ষতি নারী আসনের সংসদ সদস্য জ¦রতী তঞ্চঙ্গ্যা জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাঙামাটির বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবি, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ও যুব ইউনিয়নসহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলসমূহের রাঙামাটি শাখার নেতৃবৃন্দ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকালে প্রভাতফেরি সহকারে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাঙামাটির বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা রাঙামাটি শিশু নিকেতনের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী অনুরা দে বলেন, একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের সাথে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসেছি। যাদের জন্য আমরা আমাদের মাতৃভাষা পেয়েছি তাদের আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়ন্তী ত্রিপুরা বলেন, একুশ আমাদের অহংকার। সেই অহংকারকে সাথে নিয়েই বাংলাভাষাকে পৃথিবীর সবদিকে ছড়িয়ে দিতে পারলেই ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ স্বার্থক হবে। পুষ্পস্তবক নিবেদন শেষে তারা শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে নীরবতা পালন করেন।
মাতৃভাষার অপপ্রয়োগ বিষয়ে আবৃত্তি সংগঠন আফ্রোদিতির সদস্য সাইফুল বিন হাসান বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করছি। কেউই বাংলাটাকে শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করিনা। ভাষার এই বিকৃত ব্যবহার আমাদের জন্য লজ্জাজনক। সন্তানদের শুদ্ধ ভাষাচর্চায় অভ্যস্ত করে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান এই আবৃত্তিশিল্পী।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে রয়েছে বাঙালিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তার বসবাস। চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, খুকি, মুরং সহ মোট ১২টি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জনপদ এই পার্বত্য রাঙামাটি। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে এসেছিলেন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোও। সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, আমাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। পৃথিবীতে বাঙালিরাই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে। আমরা তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা ক্রশনুন পুইয়া পাংখোয়া বলেন, আমরা বাংলা ভাষার জন্য গর্ববোধ করি। পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি রাঙামাটির স্থানীয় আবৃত্তিশিল্পীদের পরিবেশনায় চলতে থাকে একুশের কবিতা আবৃত্তি।