মো. ইসমাইল, পানছড়ি ॥
দিন বদলায় যুগও বদলায়, বদলায় না মুজিবর চাচার ভাগ্যের চাকা। দাবদাহ আর বৈরী আবহাওয়া কোনটাই আটকাতে পারে না বয়োবৃদ্ধ মুজিবরের রিকশার চাকা। অভারের সংসারে চুলো চাঙ্গা রাখতে নিত্য সকালেই মাথায় গামছা বেঁধে রিকশা নিয়ে ছুটে আসে সকলের প্রিয় মুজিবর চাচা।
ব্যাটারি চালিত টমটমের যুগে রিকশাতে এখন আর কেউ চড়ে না। তাই বিভিন্ন দোকানে পানি, সবজির বস্তা, আবার কখনো পেঁয়াজ-আলুর বস্তা ইত্যাদি টেনেই আজো সংসারের হাল ধরে রেখেছে বয়োবৃদ্ধ মুজিবর। তবে বয়সের ভারে আর প্যাডেল ঘুরাতে পারে না। তাই পায়ে হেঁটেই রিকশা নিয়ে ছুটে ওদিক-ওদিক। বিকেল হলেই মাথার গামছা খুলে কপালের ঘাম মুছে কিছু চাল আর সবজি নিয়েই বাড়ি ফেরা হয়।
খোঁজ নিলে জানা যায়, উপজেলার জিয়ানগর গ্রামের তাইজ উদ্দিন ও মোমেনা খাতুনের সন্তান মুজিবরের বয়স এখন সত্তর ছুঁই ছুঁই। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রিকশা চালায় মুজিবর। চার সন্তানের জনক মুজিবরের ছেলে জহিরুল অসুস্থ। রিকশা টেনে পরিবারের ভরণ পোষনের পাশাপাশি ছেলের চিকিৎসা ও ঔষধপত্রাদির খরচ যোগাড় করতে হয়। ১০-১২ বছর আগে ছেলেকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় -চিকিৎসা করাতে নিয়ে বন্ধক দিয়েছে রেশন কার্ড। আজো ছুটাতে পারেনি বন্ধকী রেশন কার্ডটিও। ভবিষ্যতে পারবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ। সারাদিন রিক্সা টেনে প্যারাসিটামল সেবন করেই শরীরের ব্যাথা দূর করে নিজেকে সচল রাখে মুজিবর ।
স্থানীয়রা জানায়, প্রশাসন, বিভিন্ন বাহিনী বা সমাজের বিত্তবানরা একটু নজর দিলে শেষ বয়সে অন্তত রিকশা টানা থেকে মুক্তি পেত মুজিবর।
মুজিবরের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে পানছড়ির একমাত্র রিকশাটি তার। রিকশায় এখন আর কেউ চড়ে না। তাই বাজারে বিভিন্ন দোকানের মালামাল টেনে দিনে সর্বোচ্চ একশো থেকে দেড়শো টাকা পাওয়া যায়। সেটা দিয়েই কোন রকমে সংসার চলে। বন্ধকী রেশনকার্ডটি ছুটাতে পারলেও অন্তত দুমুঠো ভাত ঠিকভাবে খেতে পারতাম। হতাশাগ্রস্ত মুজিবর আরো জানায়, প্রতিদিন জীবিকার সন্ধানে বের হই তাই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর কিভাবে পেতে হয় সেটাও আমার জানা নাই। ঘরের অবস্থা তেমন ভালো না। জোরে তুফান এলে হয়তো পড়ে যাবে।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হাশেম হাসু মেম্বার জানান, মুজিবর একবারেই অসহায়। রিকশা চালালেই তার সংসার চলে। প্রশাসন বা বিত্তবানরা একটু নজর দিলেই তার জন্য অবসরে আসা সহজ হবে বলে তিনি জানান।