শংকর হোড় ।।
রাঙামাটির শহরের ফিশারি বাঁধ। শহরের তিনটি এলাকাকে এই বাঁধের মাধ্যমে সংযোগ দেয়া হয়েছে সেই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর। কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন বৃদ্ধি পায়, তখন হ্রদের পানি প্রায় বাঁধের সড়ক সমানে চলে আসে। এই বাঁধের সড়কটির ওপর সব ধরনের হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। একসময় রাস্তার দুইপাশে প্রচুর জায়গা থাকলেও ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন সেটি রাস্তার ধারে এসে পৌঁছেছে। সম্প্রতি কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সড়কটি এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যেকোনও সময় সড়ক ভেঙ্গে যান চলাচল বন্ধও হয়ে যেতে পারে। এর প্রতিরোধ হিসেবে সড়ক বিভাগ শনিবার থেকে বল্লি দিয়ে আবারো সড়কটি রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রায় ৫০ মিটার এলাকা বল্লি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সড়ক বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনে উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানই এই বাঁধ রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঐ সময় জেলা জুড়ে সড়কের ১৫১টি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সেসব সড়ক মেরামত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পাহাড়ধস রোধে ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। এই প্রকল্প থেকেই ৬৬৩ মিটার বাঁধের মধ্যে দুই দফায় ২৯৯ মিটার কাজ হয়। তবে বাঁধটি পুরো অংশটাই ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পুরো বাঁধটির ওয়াল নির্মাণে হাত দেয়নি সড়ক বিভাগ। আবার যেটুকু অংশ কাজ শেষ হয়েছে, সেখানেও সব অংশে মাটি ফেলা হয়নি। এতে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটির ঝুঁকি তেমন একটা নিরসন হয়নি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার বলেন, ফিশারি সংযোগ সড়ক বাঁধটি নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের অনেক প্রত্যাশা। বাঁধটি রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনে রাঙামাটির সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু আমরা দেখতে পারছি সেটা হচ্ছে না। সড়ক বিভাগ প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, কিন্তু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই বাঁধটির পুরো অংশ জুড়েই ওয়াল নির্মাণ জরুরি হলেও তাদের মধ্যে অবহেলা ও গাফিলতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আবার যে অংশটুকু কাজ হয়েছে, সেখানেও মাটি ফেলা হয়নি। তাহলে ওয়াল নির্মাণ করে লাভ কি? দুর্যোগ আসলে সড়ক বিভাগ বল্লি দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে, কিন্তু দুর্যোগ চলে গেলে তাদের আর হুশ থাকে না। তারা যে জায়গায় বর্তমানে বল্লি দিচ্ছে, প্রতিবছরই সেখানে বল্লি দেয়, তারপরও বাঁধটি তাদের কাছে কেন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে না, আমরা বোধগম্য নয়।
বাঁধটি রক্ষা ও সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। তারই একজন উদ্যোক্তা সাংবাদিক ফজলে এলাহী বলেন, ফিসারী বাঁধে এখন যে উন্নয়ন কাজ চলছে,সেটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাপক লুকোচুরি করছে,তারা বলছেই না আদতে সেখানে কি হচ্ছে ! রাঙামাটির মানুষের জানার তো অধিকার আছে, কি করছে সেখানে সড়ক বিভাগ। এই সড়কটি নষ্ট হওয়ার দায় রাঙামাটি পৌরসভা, উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, সংসদ সদস্য এবং অবশ্যই সড়ক বিভাগের। তাদের অবহেলা, অনাগ্রহ এবং অপরিকল্পিত কাজের কারণে শহরের সবচে সুন্দর সড়কটি ধ্বংস হতে চলেছে।
জেলা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বিভাগের ২৩৯ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- ৫ হাজার ৪৭০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৭ হাজার ৭৩৫ মিটার ড্রেন, ধস প্রতিরোধক কংক্রিট ঢালাই ৭২ হাজার ১৫০ বর্গমিটার। এরমধ্যে ৫ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ৫১টি স্পটে, ৬ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ৭৩টি স্পটে। ৭ মিটার উচ্চতার রিটেইনিং ওয়াল হবে ২৭টি স্পটে। পাইল ফাউন্ডেশনের দৈর্ঘ্য ১২-১৮ মিটার। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বাঁধটি পুরো অংশের কাজ হয়নি।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, তখন যে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজটি হয়েছিল, সেটার ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই প্রকল্পে জেলার অনেক জায়গায় কাজ হয়েছে, সেখানে যতটুকু চাহিদা আছে, আমরা তার পুরোপুরি করতে পারি নাই। ফিশারি বাঁধকেও গুরুত্ব দিয়ে শুরু করা হয়েছে, যদিও পুরো কাজ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পে সংশোধনী এনে আমরা বাঁধের উত্তর দিকটা পুরোটাই করার উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। আশা করছি আগামী শুষ্ক মৌসুমে বাকি অংশের কাজ শুরু করতে পারবো। আপাতত বাঁধের যে অংশে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, সেখানে বল্লি দিয়ে ধারক দেয়াল দেওয়া হচ্ছে।