অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই ॥
পাহাড়ি-বাঙালিদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র কাপ্তাই জেটিঘাটে। যেখানে প্রতি সপ্তাহের শনিবার ভোররাত থেকে হাট বসে। যেটি বিকাল পর্যন্ত চলমান থাকে। কাপ্তাই উপজেলা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এই সাপ্তাহিক হাটে ছুটে আসেন। অনেকে আবার হাটের আগের দিন থেকে কাপ্তাই চলে আসেন। থাকেন স্থানীয় কিছু কটেজ ও হোটেলে। তবে কাপ্তাই উপজেলা ছাড়াও সদুর বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, রাঙামাটির বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা নৌ-যোগে কাপ্তাই হ্রদের মাধ্যমে তরতাজা শাক-সবজি, ফলমুলসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে এখানে ছুটে আসেন।
শনিবার কাপ্তাইয়ের সাপ্তাহিক হাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোররাত থেকেই ধীরে ধীরে ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে কাপ্তাই জেটিঘাট বাজার। ঠিক ভোরের আলো ফুটতেই হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে ভরপুর হয়ে যায় এই হাট। যেখানে দেখা যায়, পাহাড়ি এবং বাঙালি ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই সাপ্তাহিক হাট। হাটে হরেক প্রকারের শাক-সবজি, ফলমুল ছাড়াও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুর দেখা মেলে। কিছু কিছু জায়গায় চোখে পড়ে পাহাড়ি ক্রেতারা বাঙালিদের কাছ থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করছে আবার বাঙালি ক্রেতারা পাহাড়ি বিক্রেতাদের তাছে পণ্য ক্রয় করছে। এযেন পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন। অন্যদিকে কাপ্তাই জেটিঘাটে সাপ্তাহিক হাটে অধিকাংশ পণ্যদ্রব্য আসে কাপ্তাই হ্রদে নৌ-যোগে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা শতশত বোট বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ঘাটে ভিড়ে। সেখানে অধিকাংশ সময় মালামাল ক্রয় বিক্রয় হয়ে যায়। সেখানারকার পণ্যদ্রব্য গুলো পাইকার ক্রেতারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে বিক্রয় করে থাকে। পাশাপাশি কাপ্তাই সাপ্তাহিক হাটে ইজারার মাধ্যমে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে।
কাপ্তাইয়ের হরিণছড়া, বারুদগোলা, বিলাইছড়ি ফারুয়া সহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, কাপ্তাই জেটিঘাটে প্রতি সাপ্তাহিক হাটে এসে পাহাড়ের বাগানের বিভিন্ন পন্য বিক্রয় করে থাকেন। আজ বহুবছর ধরে তারা দুর দুরান্ত থেকে প্রতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক হাটে ছুটে আসেন। এখানে পণ্য এনে বিক্রয় করে সবাই কমবেশি লাভবান হয়। তবে বেশিরভাগ বিক্রেতারা নৌ-যোগে আসেন তাই বোটের তেল খরচ বেশি হওয়াতে অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায়। তবুও কাপ্তাইয়ে ঐতিহ্যবাহী এই সাপ্তাহিক হাটে এসে পন্য বিক্রয় করে অনেকের সংসার চলে। তাই সব বাধা, প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে চলে আসতে হয়।
এদিকে সুদুর চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাপ্তাই জেটিঘাটে পণ্য ক্রয় করতে আসা কয়েকজন পাইকার ক্রেতা জানান, কাপ্তাইয়ের এই সাপ্তাহিক হাটে অংশ নেওয়ার জন্য একদিন আগেই অনেকে চলে আসেন। আবার অনেকে রাতেই রওনা হোন ভোরে এই হাটে আসার জন্য। এখানে অনেক কম দামে একদম তরতাজা তরি তরকারি, ফলমুল পাওয়া যায়। যার ফলে দূর-দূরান্ত ক্রেতারা এসে লাভবান হন। আর এই কাপ্তাই জেটিঘাট বাজারের পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ পাহাড়ে উৎপাদিত এসব ফসল শহরাঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
কাপ্তাই জেটিঘাট সাপ্তাহিক হাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষ বলেন, প্রতি সপ্তাহে এখানে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। কাপ্তাই উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী হাট বসে এখানে। যেখানে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। আর তাছাড়া পাহাড়ি-বাঙালি ক্রেতা বিক্রেতার এক মিলনমেলায় পরিণত হয় এই সাপ্তাহিক হাট। এখানে যেন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে তাই সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়ে থাকে।