ইয়াছিন রানা সোহেল ও মিশু মল্লিক ॥
কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল সরকারের উদ্দেশে বলেনে, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করবেন না। কোটি কোটি তরুণ ভোটার এখনো ভোট দিতে পারে নাই। আপনাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় জঙ্গি-ভূত আপনাদের ওপর ভর করেছে। রগ কাটারা আপনাদের ওপর ভর করেছে। সুতরাং ভোট নিয়ে কোনো টালবাহানা এই দেশের জনগণ সহ্য করবে না। অতি দ্রুত নির্বাচন দিন, নচেৎ কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।
প্রধান অতিথি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, অনেক ছাত্র ভাই মনে করেন, সব তারাই করেছে। আসলে বয়স কমতো তাই বুঝেনা। ১৫দিনে তারা সব করে ফেলেছে মনে করে। তারাতো এসেই গরম ভাত পেয়েছে। কিন্তু ভাত তৈরি করতে যে কত কষ্ট। চারা রোপণ থেকে শুরু আরো কত কি করতে হয়, তাতো তারা বুঝে না। বিগত ১৬বছর তিল তিল করে কষ্ট করে যে আন্দোলন বিএনপি তৈরি করেছিল সেই আন্দোলনের ওপর ভর করেই ছাত্ররা আন্দোলন করেছে।
দীর্ঘ ১৯ বছর পর রাঙামাটিতে সোমবার বিকালে শহীদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়ামে বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০০৬ সালে ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সর্বশেষ জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার ও দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপির উদ্যোগে রাঙামাটিতে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, কিছুদিন আগেও আমাদের সভা করতে দেয়নি। পারমিশনের জন্য ঘুরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত জানা যায় হাসিনার পারমিশন নাই। তারপরেও দুয়েকটার অনুমতি মিলেছে, তাও পুলিশের তল্লাসি চলতো সবখানে। মোবাইল চেক করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি তল্লাসি করে যাকে পেতো নিয়ে যেতো। এক নেতা বলতো খেলা হবে, খেলা হবে। তার খেলা হবে শুনে ভাবতাম ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু খেলা বুঝতাম। কিন্তু পরে দেখি এটা অস্ত্রের খেলা। এই খেলা আমরা খেলি না। সেই খেলোয়াড়রা এখন কোথায়। সব খেলোয়াড় লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আর ফিরতে পারবে না।
তিনি বলেন, ১৬টি বছর যা করেছে সবকিছুতে বঙ্গবন্ধু। কোনো মুুক্তিযোদ্ধার অবদান নেই। কোনো মুুক্তিযোদ্ধার অবদান নেই। যেন বঙ্গবন্ধু নিজেই দেশটা স্বাধীন করেছে। যেখানে যেতাম সেখানেই বঙ্গবন্ধু লীগ। টয়লেট টিস্যুতেও বঙ্গবন্ধু। সেন্ডেল কিনেছি সেখানেও বঙ্গবন্ধুর ছবি। আমরা বলেছি মানুষকে মানুষ বানান। দেবতা বানাবেন না। দেবতা বানালে সে দেবতা হবে না, হবে রাক্ষস। বিগত ১৬বছরে বঙ্গবন্ধুকে দেবতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর সারাক্ষণ শেখ হাসিনা বন্দনা। এক আওয়ামীলীগ এমপি সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি একদিন পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এত শক্তি কোত্থুকে আসে। তখন পদ্মা জবাব দিলো, শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা।
তিনি আরো বলেন, ১৬ বছরে শেখ হাসিনা শেখ রেহেনা দেশ ফুতুর করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ চালিয়েছে। আর শেখ রেহেনাকে টাকা না দিয়ে কোনো ব্যবসায়ী ব্যবসা চালাতে পারেনি। শেখ পরিবার হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার। অনেকেই বলেন, আপা আসবে। আমরাও বলি আপা আসুক। আসার আগে জনগণের সব টাকা ফেরত দিক। আর তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে জেলে দিক।
জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক(চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহাবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক(চট্টগ্রাম বিভাগ) হারুনুর রশীদ(ভিপি হারুন), কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক(চট্টগ্রাম বিভাগ) মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক এডভোকেট দীপেন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতি বিষয়ক সহ সম্পাদক লে. কর্নেল(অব.) মনীষ দেওয়ান, প্রাক্তন সাংসদ ও উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও রাঙামাটি জেলা,বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।