ওমর ফারুক মুছা, লংগদু, লংগদু
সরিষা ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বিস্তীর্ণ জায়গা। এ যেন ফসলি মাঠের বুকে দিগন্তজুড়ে বিছানো হলদে রঙা কার্পেট। এতে হলুদের আভা ছড়াচ্ছে এলাকাজুড়ে। ফুলের ঘ্রাণে মৌমাছির আনাগোনাও ব্যাপক সেখানে।
জানা গেছে, উপজেলার লংগদু সদর ইউনিয়নের মহাজনপাড়া গ্রামের প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে এবং কৃষকদের স্বল্প খরচে সফলতা পেতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহাযোগিতায় কৃষকরা ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাজনপাড়ার অসংখ্য কৃষকরা প্রায় ১৯ হেক্টর অর্থাৎ ১২০ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। সরিষা ফুলের সমরোহে সেই গ্রামের চিত্র বদলে গেছে। সরিষার আবদা দেখতে নিয়মিত পরিদর্শনে যাচ্ছেন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণ। এছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত লোকজন মহাজনপাড়ায় ভেড়াতে যাচ্ছেন সরিষা ক্ষেত দেখতে। মনের মত করে তুলছেন ছবি।
মাঘ মাসের কুয়াশা রোদমাখা চোখে পড়বে এক ঝাঁক পাখিদের কিচিরমিচির ও উড়াউড়ির, হলুদ-সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। সরিষা ফুলের ঘ্রাণ ফুসফুসের উপকার হয় বলে মানুষজন ক্ষেতজুড়ে ঘ্রাণ নিতেও ছুটে যান। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা।
সরিষা আবাদকারী পরামর্শ চাকমা বলেন, এবছর তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আগে আমি শুধু বোরো চাষ করতাম। এই প্রথমবার সরিষা চাষ করেছি। আশাকরি লাভবান হবো।
একই এলাকার মিটন চাকমা জানান, তিনিও এবার পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। গতবারের থেকে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।
আরেক কৃষক নীলকান্তি চাকমা বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সময়ে সরিষা চাষ করেছি। সরিষাতে খরচ চার হাজার টাকার মতো হয় বিঘা প্রতি। ফলন তুলনা মুলক ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি আরো জানান, সরিষার কোনো কিছু ফেলা যায় না, গাছ খড়ি এবং খৈল গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলছেন, অন্যান্য চাষাবাদ থেকে সরিষা চাষ অনেকটাই সহজ। ওই এলাকার কৃষকেরা চাষের মৌসুমে বোরো ধানসহ তামাক আবাদ করতেন। এর মাঝে কিছু সংখ্যক জমি পতিত অবস্থায়ও থাকত। কিন্তু এবার তারা উন্নত জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। এতে আমন ধান বেশি ফলন পাওয়ার পাশাপাশি সরিষা চাষের কারণে আর্থিকভাবেও তারা অধিক লাভবান হবেন। কৃষকরা মাত্র ৭৫ দিনে সরিষা কেটে ফলন ঘরে তুলতে পারে। এতে করে ফলন নষ্ট হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নাই। উপজেলা কৃষি অফিস সর্বদা কৃষকদের পাশে রয়েছে।