পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভয় আর আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে রোয়াংছড়ি সদরে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে ১৭৮ জন গ্রামবাসী। শুক্রবার দুপুরে খানতাম পাড়া এলাকা থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দূর্গম খানতাম পাড়া এলাকায় পাহাড়ে অরণ্যে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মী (কেএনএ) সাথে সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক অস্ত্রধারীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। বৃহস্পতিবাররাতে এবং শুক্রবার সকালে কয়েকদফায় গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাররা পাহাড়ের ঢালে ৮ জনের লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছে। নিহতদের মধ্যে সাত জন বম জনগোষ্ঠীর সদস্য বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বীকার করেছে বম জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাসনাল আর্মী (কেএনএ)। এরা হলেন- ভানদু বম (৩৫), সাংখুম বম (৪৫), সানফির থাং বম (২২), বয়ে রেম বম (১৭), জাহিম বম (৪০), লাল লিয়ান নাং বম (৪৪) এবং লালঠা জার বম (২৭)। নিহতরা রোয়াংছড়ি উপজেলার জুরভারাং পাড়া এবং পানখিয়াং পাড়ার বাসিন্দার। অপরজনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। কুকি চিন আর্মীর দাবী, সরকারের মদদে অস্ত্রধারী সংগঠনের সশস্ত্র বাহিনী সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের হত্যা করেছে। তবে ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক উবামং মারমা বলেন, ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। তাদের হাতে ভারি কোনো অস্ত্রশস্ত্রও নেই।
এদিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভ্যন্তরিন সড়কের খানতাম পাড়ার খেয়াং জনগোষ্ঠীর ৯০টি পরিবারের ১৭৮ জন নারী-পুরুষ, শিশু ভয়ে আতঙ্কে পালিয়ে রোয়াংছড়ি সদরে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কারীদের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ঘটনাস্থল আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। আশ্রয় নেয়া পরিবারদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবার এবং পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
আতঙ্কিত পাড়াবাসী সাথোয়াই খেয়াং, অংলে খেয়াং বলেন, খানতাম পাড়াটি রোয়াংছড়ি ও রুমা দুটি উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকায়। পাড়ার পাশ^বর্তী পাহাড়ে বৃহস্পতিবাররাতে ও শুক্রবার সকালে বিকট শব্দে গোলাগুলি হয়েছে। গোলাগুলি কাদের মধ্যে হয়েছে জানিনা। কিন্তু আমরা দুপারের পাড়াবাসীরা ভয়ে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে রোয়াংছড়ি সদরে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। তাদের গায়ে জলপাই রঙের পোষাক পরিহিত ছিলো।
রোয়াংছড়ির থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, সন্ত্রাসী দুটি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। ঘটনাস্থলে ৮জনের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে নিহতদের লাশগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বান্দরবান পুলিশ সুপার মো: তারিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দুটি সংগঠনের মধ্যকার গোলাগুলিতে ৮ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আধিপাত্য বিস্তারের দ্বন্দে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল’সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগনের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।