দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড়টোয়েন্টিফোর ডট কম’র প্রতিনিধি সম্মেলন
ইয়াছিন রানা সোহেল
পার্বত্য চট্টগ্রামের বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের অঙ্গীকার নিয়ে দশ বছর আগে শুরু হয়েছিল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘পাহাড়২৪ ডটকম’। বছর দুয়েক পরেই যাত্রা শুরু হয় ‘দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম’ পত্রিকার। পাহাড়ের যেকোন সংবাদকে দেশ বিদেশের লোকজনের কাছে তুলে ধরাই ছিল এই দুটো পত্রিকার লক্ষ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামে গতানুগতিক সাংবাদিকতার পথকে ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরার লক্ষ্যে তরুন সাংবাদিক ফজলে এলাহীর নেতৃত্বে শুরু হয় অনলাইন ও দৈনিক পত্রিকার যাত্রা। ফজলে এলাহী-হেফাজত সবুজ-ইয়াছিন রানা সোহেল আর শংকর হোড়ের সাথে যুক্ত হয় এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ, মেধাবী ও চৌকষ সংবাদকর্মী। গড়ে উঠে একটি পরিবার; একটি টিম। আর সর্বমহলে এই টিমের পরিচিত পায় ‘পাহাড় টিম’ নামে। কারো দান-অনুদানে নয়; সম্পূর্ণ নিজেদের ইনভেস্টেমেন্টে শুরু করা হয়। প্রচন্ড আবেগ আর হাজারো পাঠকের ভালোবাসাকে সাঙ্গ করে যাত্রার শুরুটা মসৃণ হলেও দিনদিন ভালোবাসা আর ঘৃণার মাত্রাও বাড়তে থাকে। বস্তুনিষ্ট সংবাদ খোঁজা মানুষগুলোর কাছে আস্থা-ভালোবাসার ঠিকানায় রুপ নেয় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড়২৪ ডটকম। কিন্তু সমাজে ভালো মানুষের মুখোশ পড়া মানুষগুলোর কাছে এ দুটো সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠে চোখের কাটার মত। যার কারণে পথচলার এক দশকে নানাভাবে তারা অপবাদ দিয়ে অপদস্ত করার নানা অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এখনো সুযোগ পেলে কুঠারাঘাত করবে। এসব রক্তচুক্ষুকে উপেক্ষা করে নীতি আর আদর্শের প্রতি অটল-অবিচল থেকে স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে পাহাড়২৪ ডটকম ও দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম-এর পথচলা। তবে এই পথচলায় শুরু থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলা ও জেলা শহর থেকে অনেকেই যুক্ত ছিলেন। নীতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে মাঝপথে ছিটকে পড়ে কেউ কেউ। যারা আকড়ে ছিলেন; এখনো আছেন-পার্বত্য চট্টগ্রাম-এর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংবাদ যারা প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করছেন। যাদের ত্যাগ-শ্রমে টিকে আছে এ দুটো পত্রিকা; কুড়িয়েছে হাজারো মানুষের ভালোবাসা। তাদেরকে একত্র করে ভালোবাসার মিলনমেলা করার উদ্যোগ নেয় পাহাড় টিম।
শনিবার দিনটি ছিল পাহাড় টিমের মিলনমেলা আর সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা বিনিময়ের দিন। দিনটিকে রঙিন ও স্বরনীয় করে তুলতে পরিকল্পনানুযয়াী কাজ শুরু করে পাহাড় টিম। পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৬উপজেলা প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে মফস্বল সম্পাদক সাইফুল হাসান। কার্পাসমহল প্রেসে চলে গিফট আর প্রকাশনার যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। শুক্রবার রাতেই আসতে শুরু করেন দুর-দুরান্তের প্রতিনিধিগণ। রাতে থাকা-খাওয়ারও বন্দোবস্তি করা হয় আগেবাগেই। শনিবার ভোরে রওনা হয় কাছের উপজেলা প্রতিনিধিগণ। সকাল নটার আগেই সবাই এসে উপস্থিত হন জেলা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা চিং হ্লা মং মারী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে। রেজিস্ট্রেশন পর্ব শেষ করে সবাই উপস্থিত হলরুমে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। তারপর পরিচয় পর্ব। একটি মফস্বল পত্রিকার এমন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে সবার চোখে-মুখে বিস্ময়ানুভুতির ছাপ। পরিচয় দিতে গিয়েই সেই অনুভুতি আবেগে প্রকাশ করতে থাকেন একে একে। সম্পাদক ফজলে এলাহী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। পত্রিকা আর অনলাইনের শুরু ও পথচলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর নির্বাহী সম্পাদক হেফাজত সবুজ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। নিউজের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন চীফ নিউজ এডিটর শংকর হোড় ও বার্তা সম্পাদক ইয়াছিন রানা সোহেল।
এরপর আলোচনা করেন মফস্বল সম্পাদক সাইফুল হাসান, চীফ রিপোর্টার জিয়াউল হক, চীফ ফিচার এডিটর তানিয়া এ্যানি, ফিচার এডিটর শুভ্র শুভ্র মিশু, ডিজিটাল এডিটর মিশু মল্লিক ও চীফ ফটোগ্রাফার তৌসিফ মান্নান। টি ব্রেক আর লাঞ্চের ফাঁকে গ্রুপ ছবিও তুলে সবাই। দুপুরের পরে প্রতিনিধিগণ খোলামেলা আলোচনায় আবারো নিজেদের আবেগ-উচ্ছ্বাসের অনুভুতি তুলে ধরেন। পাহাড়ের সিনিয়র সাংবাদিক রামগড়ের শ্যামল রুদ্র, কাপ্তাইয়ের নজরুল ইসলাম লাভলু, রাঙামাটির চৌধুরী হারুন অর রশীদ, দীঘিনালার জাকির হোসেন সাংবাদিকতায় নিজেদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এমন আয়োজনের বিস্ময় প্রকাশ করেন। লংগদু উপজেলার মোঃ ওমর ফারুক মুছা, আরমান খান, কাউখালী উপজেলার জয়নাল আবেদিন, বিলাইছড়ি উপজেলার পুস্পমোহন চাকমা, মাটিরাঙ্গার সাগর চক্রবর্তী, মহালছড়ি উপজেলার মিল্টন চাকমা, মানিকছড়ি উপজেলার মিন্টু মারমা, আলীকদম উপজেলার এসএম জিয়াউদ্দিন জুয়েল নিজেদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। নবাগত সংবাদকর্মীদের জন্য অনুপ্রেরণার আয়োজন বলে নিজেদের ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন বাঘাইছড়ি উপজেলার মোঃ মাহমুদুল হাসান, নানিয়ারচর উপজেলার মেহেরাজ হোসেন সুজন, রাজস্থলী উপজেলার হাবিবুল্লাহ মিসবাহ, কাপ্তাই উপজেলার অর্নব মল্লিক, রাঙামাটি সরকারি কলেজ প্রতিনিধি মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন।
থানচি উপজেলা প্রতিনিধি অনুপম মারমা বলেন-‘বহু বছর যাবৎ সাংবাদিকতায় আছি, কিন্তু কোন স্থানীয় দৈনিক এমন সম্মেলনের সাহস দেখায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সেই কাজটি করে দেখিয়েছে। আজকের আয়োজন জাতীয় পত্রিকার চেয়েও ভাল হয়েছে,আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য প্রত্রিকার সম্পাদকদের সাথে দেখা করতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। রাঙামাটিতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্পাদ ও টীমকে দেখলাম একদম উল্টো। তারা আমাদের সে সম্মান দেখালেন তাতে দায় বেড়ে গেল বহুগুণ। সম্পাদক মন্ডলীর সাথে প্রতিনিধিদের এমন মধুর সম্পর্ক আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে।’
অসুস্থ শরীর নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম পত্রিকার প্রকাশক সেলিনা সুমি। প্রতিনিধিদের সাথে পরিচিত হয়ে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানান। প্রতিনিধিদের যেকোন প্রয়োজনে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন। পড়ন্ত বিকেলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে একে অপরের সাথে যোগাযোগ বাড়ানোর গল্পে মেতে উঠেন সকলে। একে অপরের সাথে সেলফি তুলে, গ্রুপ ছবি তুলে বিদায় জানায় একে অপরকে। বিদায়ের আলিঙ্গনে ভালোবাসার বন্ধনকে সুদৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘরে ফিরেন সকলে।