একে অপরের গায়ে পানি ছুড়ে দেয়ার মাধ্যমে পুরোনো বছরের সব জীর্ণতা-গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার রীতিকে সাংগ্রাই জলোৎসব বলা হয়।
রবিবার সকালে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) এর আয়োজনে জলোৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এই সাংগ্রাই জলোৎসবের মাধ্যমে রাঙামাটিতে শেষ হয়েছে বৈসাবি উৎসব।
মারমা সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই আয়োজন জানালেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৈহিদ প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মং বাজিয়ে জল উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পরে অতিথিরা জল ছিটিয়ে সাংগ্রাঁই জল উৎসব এর উদ্বোধন করেন।
এসময় যুবক যুবতীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করেন।
আয়োজকরা জানায়, পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষ পুরোনা বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের মাধ্যমে তাদের সামাজিক উৎসব বৈসাবি পালন করে। প্রত্যেকে জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা নামে উদযাপিত এই অনুষ্ঠানকে এক্ষেত্রে বৈসাবি হিসেবে ডাকা হয়। যার মাধ্যমে সব জনগোষ্ঠীর ঐক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ৪ এপ্রিল জেলা পরিষদের পাঁচ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসবের মাধ্যমে এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের নানান বর্ণিল আয়োজন এবং বাড়িতে বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ শেষে আজ মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই জলোৎসবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে এই বছরের বৈসাবি’র আনুষ্ঠিকতা। এদিন জলকেলিতে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা।
জলোৎসবে দুইপাশে দুই পানিভর্তি নৌকার পাশে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িনোর পর
ঘণ্টা বাজানোর পরপরই শুরু হয় একে-অপরের গায়ে পানি নিক্ষেপ। পানি নিক্ষেপের ফলে অতীতের সব গ্লানি-দুঃখ-হতাশাকে বিদায় জানিয়ে সুন্দর পরিশুদ্ধ হৃদয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। এসময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা পরিবেশন করা হয়। এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তরুণ-তরুণীরা।
উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বক্তব্যে বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই সারাদেশে ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসব মুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারছেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) সভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, এই উৎসবের মধদিয়ে নতুস বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। নতুন বছর সবার সুখ শান্তিতে কাটুট। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
১২ এপ্রিল ফুল ভাসিয়ে শুরু হওয়া বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠিকতা রবিবার সাংগ্রাই জলোৎবের মাধ্যমে শেষ হয়েছে বৈসাবির যাবতীয় আয়োজন।