ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ি গ্রামের সন্তান বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি ২০২১ সালে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ২০২৩ সালের ৮ জুন হতে ১৮ জুলাই পর্যন্ত মোট ৪০ দিনে তিনি সাইকেলে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি একজন নিয়মিত রক্তদাতা ৬ বার রক্ত দান করেছিলেন। সে ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠন ‘কাপ্তাই ব্লাড ব্যাংক’ নামে একটা সংগঠন গঠন করেছিলেন। তার সংগঠনের রক্তদাতারা রক্তের প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়ায় স্বেচ্ছায় বিনামূল্যে রক্ত দিয়ে। তাই ভ্রমণের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদানে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, মাদক দ্রব্য বিরোধী জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন করে উৎসাহিত করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি একই উদ্দেশ্যে সাইকেলে করে ভারতের ১০টি অঙ্গ রাজ্য ভ্রমণ করেন। ২০২৩ সালে ১৭ ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বনগাঁ দিয়ে প্রবেশ করে ১৯ ডিসেম্বর কলকাতা হতে বাইসাইকেল পুরো ভারত ভ্রমণের যাত্রা শুরু করেন তিনি। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৭৩ দিন তিনি ৫ হাজার ৭শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, ছত্তিসগড়, তেলেঙ্গানা ,অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা এবং গোয়া অঙ্গ রাজ্য ভ্রমণ করে। বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবার জন্য গত ২৯ মার্চ ট্রেনে করে রওনা দিয়ে ২রা মার্চ কলকাতায় পৌছেন।
শনিবার (২ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যার। তিনি বলেন, মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সচেতন করতে এবং মাদক গ্রহণের কুফল দিক তুলে ধরতে আমার সাইকেল নিয়ে এই ক্যাম্পেইন। তাই ভারতের বিভিন্ন স্কুলে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কাছে গিয়ে, চলার পথে পথে, চায়ের দোকানে, শপিং মলের সামনে যেখানে পারা যায় জনসচেতনতার বার্তা দিয়েছিলেন। সাইকেল স্পনসর পানাম সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহায়তায় ও রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ স্যার, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং স্যার এবং সাথে বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমি ভারতের ১০টি অঙ্গ রাজ্যে সাইকেল নিয়ে ৭৩ দিন ৫ হাজার ৭ শত কি: মি: পথ পাড়ি দিয়েছি। এই ভ্রমণে চলার পথে অনেকের ভালোবাসা, সহায়তা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছি। অনেক সময় বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে আমি বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে পৌঁছেছি। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং কষ্টের বিষয় ছিল নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে অনেক খোজাঁর পর বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাস স্টেশন, পেট্রোল পাম্প এবং কমিউনিটি সেন্টারে থাকার অনুমতি পাই। আর এক রাতে পেট্রোল পাম্পে অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনা ঘটে মাতাল লোকদের সাথে। যেটা পুলিশের সহায়তা নিতে থানা পর্যন্ত যেতে হয়েছিলো।
তিনি আরোও বলেন, ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী লোকজন যেখানে আমাকে দেখেছে সেখানে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। সাথে ভারতীয় লোকজনের সহায়তায় এত দূর সম্পন্ন করতে পেরেছি। আবার কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ করে কর্ণাটক অঙ্গ রাজ্যের মহাবোধি সোসাইটি বৌদ্ধ বিহারের পক্ষ থেকে পুজনীয় ভান্তেরা আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাচির এমপি নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সাথে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন স্কুলের পক্ষ, বিভিন্ন রাজ্যের সাইকেল গ্রæপের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন যা ভুলার নয়। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমি এখন বাংলাদেশে চলে আসার অপেক্ষায় বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছি। পরবর্তীতে আবারও ভিসা নিয়ে বাকি অঙ্গ রাজ্য ভ্রমণ করবো। পরিশেষে এ ক্যাম্পেইনে যারা বিভিন্ন সহায়তা করে আমার পাশে ছিলেন সবার কাছে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।