হেফাজত সবুজ ॥
কারিগরি শিক্ষায় মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাউখালীতে ২০১৭ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক বছরের পাঁচতলা বিশিষ্ট এই ভবনটি কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সাত বছরে শেষ হয়নি ভবনের কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশলের অবহেলার ভবনটির কাজ শেষ হচ্ছে না। অথচ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে পাঠ্যপুস্তক আসলেও সেগুলো গুদাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে কারিগরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্টদের কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ২০১৭ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যন্ড কলেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে জেলার কাউখালী উপজেলায় শুরু হয় টেকনিক্যাল স্কুলের নির্মাণ কাজ। পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমি ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যাবধি শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। ২০২২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস দিলেও তা সম্ভব হয়নি। কাজেরও হয়নি অশানুরুপ অগ্রগতি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশাল এই ভবনে মাত্র দুজন শ্রমিক দিয়ে কাজ করছেন। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য চলে এসেছে পাঠ্যপুস্তক। যা পরে আছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গুদামে। অযতেœ নষ্ট হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকগুলো। নির্মাণ কাজের এমন ধীরগতিতে হতাশ স্থানীয়রা। আর প্রতিষ্ঠাটি চালু না হওয়ার কারিগরি শিক্ষায় গ্রহণ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, কাজের এমন ধীরগতি অন্য কোন কাজে দেখিনি। যে কাজ এক বছরে শেষ হওয়ার কথা, তা সাত বছরেও শেষ না হওয়াটা দুঃখজনক। অন্যদিকে পাঠদানে জন্য চলে আসা বইগুলো নষ্ট হচ্ছে গুদামে। আমরা চাই দ্রুত কাজ শেষ করে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যপারে সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ইচ্ছা ছিল এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে কারীগরি শিক্ষায় নিজেকে শিক্ষিত করে কর্ম জীবনে পদার্পণ করব। কিন্তু সাত বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় সে আশা পূরণ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমরা চাই দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু হোক।
ভবনে মাত্র দুইজন শ্রমিক কাজ করলেও, নির্মাণের ধীরগতি মানতে নারাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। এ এইচ এন্টারপ্রাইজ প্রকল্প প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আগে কাজ কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ভাল। বাকী কাজ এ বছরই শেষ হবে।
ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশলের এমন অবহেলার ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরা। কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা বলেন, সরকার আমাদের এগিয়ে নিতে এই প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন দিয়েছেন। তাদের (ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশল) অবহেলার কারণে আমরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের পরে খাগড়াছড়িতে কাজ শুরু হয়েছিল। তাদের কাজ শেষ হয়ে শিক্ষা কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। আমাদের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বহুবার উপজেলা মাসিক সভায় ঠিকাদারকে ডেকেছি। কিন্তু তিনি আসেনি। অথচ বাইরে বলে বেড়ান বিভিন্ন সমস্যার কারণে কাজ করতে পারছেন না। কোন সমস্যা থাকলে তিনি তো আমাদেরকে বলবে। জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমরা তা সমাধান করে দিবো। আসলে এগুলো তার অজুহাত ছাড়া কিছুই না।
এ বিষয়ে রাঙামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজক চাকমা বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে ওয়ার্ক প্ল্যান নেয়া হয়েছে। আমরা আগামী বছরে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে কাজ করছি।