বিপ্লব ইসলাম, লংগদু ॥
সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিন সন্তানের জননীতে রাতের আঁধারে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার করল্যাছড়ি ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী জননী বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভিকটিমের সাথে কথা বলে জানা জানায়, গত শুক্রবার রাতে তিনি তার তিন শিশু সন্তান নিয়ে নিজের বসত ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ রাত তিনটার দিকে তার ঘরে কেউ ঢুকে তাকে জড়িয়ে ধরে। তিনি আরো বলেন, আমি ঘুমে থাকায়, আমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার ঘুম ভাঙ্গে, আমি সজাগ হয়ে দেখি মুখে গামছা বাঁধা একজন ব্যক্তি আমাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে। আমার পরনের ওড়না দিয়েই আমার মুখ বেঁধে ফেলে, আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন এমন করছেন সে বলছে আমাকে চায় তিনি, আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে খাটের থেকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং আমার ঘরের বটি দা দিয়ে আমার গলায় ধরে বলে চিৎকার করলে তোকে জবাই করে দিবো। আমার আওয়াজে আমার ১২ বছরের বড় ছেলে উঠে চিৎকার করলে তখন পাশের বাড়ির ভাবী শুনতে পায়, তখন তিনি জোর করে আমাকে খাট থেকে ফেলে দিলে আমি জোরে চিৎকার করি। ভাবী আমাকে ডেকে জানতে চায় কি হয়েছে তখন আমি আমার ঘরে চোর ঢুকেছে বলে তাকে আসতে বললে লোকটি বাটন সেট মোবাইল রেখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি লোকটি ছিলো আবু সালেহ (আদু)।
ভিকটিমের ১২ বছরের ছেলে বলেন, আমার আম্মু যখন চিৎকার করে তখন আমার ঘুম ভাঙ্গে, আমি ভয়ে কান্নাকাটি করি। লোকটা মাকে ধরে জোরাজুরি করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
পাশের বাসার বাড়ির গৃহবধূ জানায়, চিৎকার চেঁচামেচি শুনে এগিয়ে আসলে অপরাধী পালিয়ে যায়। আমি এসে দেখি ভাবি কাঁপতেছে, দ্রুত আশপাশের লোক ঢেকে তার চাচাতো দেবরের মাধ্যমে ভোর চারটায় লংগদু সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই, সেখান থেকে ডাক্তার তাকে খাগড়াছড়ি রেফার করেন।
গৃহবধূর খালা, যিনি হাসপাতালেই মহিলার পাশে রয়েছেন, তিনি জানান, আমরা খেয়ে না খেয়ে হাসপাতাল আছি। রোগীর অবস্থা ভালো না, বমি আর পেট ব্যথায় ভুগছেন। আমাদের নিয়ে এলাকার মানুষজন কাঁদা ছুঁড়াছুড়ি করছে। আমরা গরীব মানুষ আমরা ঝামেলা করতে পারবো না। আমরা বিচার চাই। আমাদের চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছে হাসান আমরা সেটা গ্রহণ করিনি।
এ বিষয়ে জানতে দেবরকে ফোন করলে, তিনি বিভিন্ন ভাবে ঘটনাটি এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে স্বীকার করে বলে ঘটনা সত্য, আমরা আদুর মোবাইল পেয়েছি, রোগীর অবস্থা ভালো না তাই খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসছি। তবে এবিষয়ে নিউজ বা লেখালেখি না করার জন্য বলেন সে। ঘটনার পরদিন বিষয়টি পুরোপুরি সত্যতা পাওয়ার পর তাকে আবার ফোন করা হলে সে জানায়, আমরা যে মামলা করবো লংগদু হাসপাতালের ছাড়পত্র হারিয়ে গেছে, কি ভাবে করবো? আপনাকে অপরাধীর পক্ষ হতে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নেও তিনি অস্বীকার করে বলে আমাকে টাকা দেয়নি। প্রতিনিধিকে তিনি আবারো বলেন আপনারা কেন এগুলো নিয়ে লেখালেখি করতে চান গরীব মানুষ তারা, ওরা মামলা করে কি করবে।
এবিষয়ে আদুর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে সম্ভব হয়নি, আদুর বাবা খালেক মুন্সি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ছেলে এই কাজ করতে পারে না। ঘটনার রাতে তারা একটা মোবাইল ফোন নিয়ে আমার বাড়িতে আসে, আসার পর দেখি এটা আমার ছেলের মোবাইল। তারপর ছেলের বউয়ের নাম্বারে কল দিয়ে জানি আমার ছেলে ঘরে আছে। সকালে শুনি আমার ছেলের ঘরেও চুরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কেউ চুরি করে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে একই রাতে আবু সালেহ আদু বাসায় চুরির বিষয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা দিয়ে একটি অভিযোগ করেন, পরবর্তীতে নিজেই সেটি স্থানীয়ভাবে সমাধান করবে বলে প্রত্যাহার ও করেন।
খাগড়ছড়ি সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত আর এম ও ডাক্তার রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, একজন ভর্তি ছিলেন, তবে আমি এখন বাইরে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।
লংগদু থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, ভিকটিমের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। দ্রুত আসল অপরাধীকে বের করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।