জিয়াউল জিয়া ॥
তিন পার্বত্য জেলার বিশাল সীমান্ত সুরক্ষায় চলছে সড়ক নির্মাণ। চ্যালেঞ্জিং এই কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স। ২০১৯ সালের শুরু হওয়া প্রথম পর্যায়ের ৩১৭ কিলোমিটারের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৮২ভাগ শেষ হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সাইচল ক্যাম্প পর্যন্ত সড়কের অগ্রগতি পরিদর্শন করে কাজের সার্বিক অগ্রগতিতে সন্তুটির কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটির বিলাইছড়ি ফারুয়া কিবাং জুরাছড়ির দুমদুম্যার কথা আসলেই যেখানে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগতো দুইদিন থেকে চারদিন। সেখানে এই সড়কটি ব্যবহার করে মাত্র দুই ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বছর খানেক আগেও এমন ছিলো না। দুর্গম পাহাড় জয় করে সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ। পাহাড়ি পথে এই সড়ক নির্মাণ ছিলো চ্যালেঞ্জিং। সড়কটি শুধু এলাকার মানুষের জীবন সহজ করেনি, সুরক্ষিত করেছে পার্বত্য অঞ্চলের বিশাল সীমান্তকে। ইতোমধ্যে এই সড়ক স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে খুলবে নতুন দুয়ার। ইতোমধ্যে এই সড়কে বড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। সড়কে পাশে বাড়তে স্থানীয়দের বসতি ও দোকান। স্থানীয়দের বাড়ছে কর্মসংস্থান। যা এখানকার মানুষের কাছে এখনো স্বপ্নের মত। এমন উন্নয়নে খুশি দুর্গম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
বিলাইছড়ি উপজেলার রোয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নন্দলাল চাকমা চাকমা জানান, সড়ক নির্মাণ হওয়ার আগে নদী পথে তক্তানালা হয়ে জেলা শহরের পণ্য যোগাযোগ চিকিৎসার জন্য রোগী নিয়ে যেতাম। যেখানে আগে কোন কোন গ্রামে থেকে জেলা শহরের যেতে এক থেকে দেড়দিন লাগতো। এখন মাত্র কয়েক ঘন্টায় এই সীমান্ত সড়ক ব্যবহার করেই যেতে পারি।
বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, আগে পণ্য পরিবহন কঠিন থাকায় নিজেদের জন্য খাবার উৎপাদন করতাম। এখন অনেক বেশি পণ্য উৎপাদন করি অনেক ক্রেতা এখন গ্রাম থেকেই আমাদের পণ্য কিনে নিয়ে যায়। এতে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
সাইচল গ্রামের আরেক বাসিন্দা ক্লিন্টন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, আগে আমাদের গ্রামের কারো অসুখ হলে কাছের হাসপাতালে কাঁধে করে পায়ে হেঁটে নিতে একদিন লাগতো। অনেক সময় রোগী পথের মারা যেত। এখন প্রায় সময় পথে মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। অথবা সড়কের কাজে ট্রাকগুলো দিয়ে দ্রুত কাছেই রাজস্থলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়েছে।
ইসিবির তথ্যমতে মোট সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হবে ১০৩৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটির প্রথম ধাপে ৩১৭ কিলোমিটার মধ্যে ২২০ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। মে মাসে শেষ হবে প্রথম ধাপের কাজ। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৩৫০ কিলোমিটার কাজের প্রস্ততি নেয়া রয়েছে। যা শেষ করতে আরও আট বছর সময় লাগবে। এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ শেষ হলে বান্দরবানের ঘুমধুম থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় যাওয়া সহজ হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ১৭, ২০ ও এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা।
সীমান্ত সড়ক নির্মণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল ভূঁইয়া মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, এই সড়কে কাজ করা ছিলো আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বড় কারণ এই এলাকায় শ্রমিক পাওয়া, পণ্য সঠিক সময়ে নিয়ে আসা, কিছু বিচ্ছিন্নতাবদী দলের উপস্থিতি, এখানকার প্রকৃতি, মাটি সবকিছু মিলে কঠিন ছিলো। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সকল প্রকার চ্যালেঞ্জকে জয় করে দুর্বার গতিতে সীমান্ত সড়কের কাজ এগিয়ে চলছে। এই বর্ষা মৌসুমের আগেই এই প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
সড়ক, পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী জানান, এই প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। এই সড়কের প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি মে মাসে কাজ শেষ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তার পরেই দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরুর বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। এরপর তৃতীয় ধাপের কাজ করা হবে।