অনুপম মারমা, থানচি
বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন বাস করে। প্রধানত জুমচাষ থেকে পাওয়া ধান, ভুট্টাসহ সাথী ফসলে সারাবছরের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন তারা। এবার ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। আগামী এক বছরে তাদের পরিবার কীভাবে চলবে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাবেন কী করে, সে চিন্তায় জুমচাষিদের চোখে ঘুম নেই। তবে জুমের উদপাদিত সোনালী ফসলের ছয় মাস নির্ভর করে বাকি ছয় মাস আগামী বছরের ধানের ওপর দাদন কারবারী ও বাজারের ওপর চলে পাহাড়ে হাজারো জুমিয়া পরিবার।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষায় লিটক্রে, মেনহাত, বুলু, তাংখোয়াই, পান ঝিরিসহ আশপাশ এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ে উঁচু জমিতে ধান, তিল, ভুট্টা, মরিচ, শাকসবজি, ফল, কুমড়াসহ নানা জাতের ফসলের চাষ করেছে। ধান পেলে ও সাথী ফসল মরিচ, ভূটা, তিল, কুমড়া, মার্ফা কোনটা ফলন হয়নি। তবে জুমচাষিরা বলেন, এবার বৈশাখ-জ্যৈাষ্ঠ-আষার মাসের বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফসল ভালো হয়নি। খরা ও রোদে চোখের সামনে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল ঝলসে গেছে, কোথাও ধানে চিটা বেশি; কিন্তু সেচের সুযোগ নেই।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের মোট ২৪১৩ হেক্টর পাহাড়ি উঁচু-নিচু জমিতে ২৬৫৭ জন কৃষক জুম চাষ করেছে। চলতি বছরে ৩০১০ মেট্রিক টন (ধান) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দেখানো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানান পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা জুমের ফসল সংগ্রহের কাজ চলবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে বুলু ¤্রাে পাড়ার বাসিন্দা সিংক্লান ¤্রাে পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবা, ছেলেমেয়েসহ আটজন সদস্য রয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাহাড়ি জমিতে ১৩ হাঁড়ি (১ হাঁড়ি ১০ কেজি) বীজধান রোপণ করে ৫০০ হাঁড়ি ধান পান। এ ছাড়া মিষ্টিকুমড়া, জুমকুমড়া, তিল, ভুট্টা, মরিচ, ফল (মারফা) বিক্রি করে ভালো লাভ হয়েছে। পরিবারের ভরণপোষণে অসুবিধা হয়নি।
কলম ম্রো বলেন, চলতি বছরে মায়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ি জমিতে ১২ হাঁড়ি ধান লাগানোর হয়; কিন্তু প্রয়োজন সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ও প্রখর রোদে ধানসহ অন্য ফসল মরে গেছে। বৃষ্টি না হলে ১০০ হাঁড়ি ধান পাবেন কি না সন্দেহ করছেন। তার মতো, মেনহাত পাড়ার ২০ পরিবার, তাংখোয়াই পাড়ার ১৮ পরিবার, পান ঝিরি পাড়াসহ প্রায় ৩০টি পাড়া একই পরিণতি হবে।
থানচি সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে কাইথাং ¤্রাে পাড়ার বাসিন্দা রেংক্লান ম্রো ৬০ বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের আমরা চিনি না, জানি না। যোগাযোগ ভালো হলেও তাঁরা আমাদের পাড়ায় কোনো দিন আসেন না। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে না দেওয়ায় আমাদের ওয়ার্ডের ৭-৮টি পাড়ার লোকজন কৃষি বিভাগের কোনো সুবিধা পায়নি ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাশ গুপ্ত বলেন, চলতি বছরে ২৫০ কৃষক পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রণোদনা বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির জন্য পার্য় ২০ পরিবারকে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে সহযোগিতা করা হয়েছে। তাঁদের ফসল খুবই ভালো হয়েছে এবং তাঁরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন।