জিয়াউল জিয়া
তিন পার্বত্য জেলা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। তবে গত কয়েক বছর ম্যালেরিয়া রোগী সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। রাঙামাটির উপজেলাগুলোর মধ্যে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়িতে রোগী বেশি পাওয়া যায়। দীর্ঘ বর্ষা, মশারির কার্যকারিতা কমে যাওয়া ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন জেলার সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ে গত মে ও জুন এই দুই মাস ধরে দ্রউত বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। জেলা সদরের চেয়ে এ রোগের প্রকোপ উপজেলায় দুর্গম এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি। যা গত দুই মাসে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
এবছর অন্যান্য উপজেলার থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে জুরাছড়ি উপজেলায়। বিশেষ করে দুর্গম মৈদং ও দুমদুম্যা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মৈদং ইউনিয়নে আমতলা, ভুয়াতলীছড়া, জামেরছড়ি। দুমদুম্যা ইউনিয়নে গবাছড়ি, করইদিয়া, বগাখালী, দুমদুম্যা লাম্বাবাগছড়া, আদিয়াবছড়া, গ্রামের মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গোবাছড়ি, ৪নং ওয়ার্ডের করাইছড়ি, ৫নং ওয়ার্ডের বগাখালী, ৬নং ওয়ার্ডের দুমদুম্যা ও আদিবছড়িতে সব বেশি রোগী সনাক্ত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় খুব সহজেই সেখানে যাওয়া সম্ভব হয় না। এসব স্থানে পায়ে হেটে যেতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ দিন। সীমান্ত সড়ক হওয়াতে বগাখালী, দুমদুম্যা ও আদিবছড়িতে মোটরসাইকে যাওয়া যাচ্ছে। জেলা শহরে আসতে তাতেও গুনতে হাজার টাকা। আবার বিলাইছড়ি উপজেলা দিয়ে শুঙ্ক মৌসুমে মোটরসাইকে যাওয়া যায়। গোবাছড়ি যাওয়া যায়। বৃষ্টি হলে পায়ে হাটা ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নাই।
রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য আরও বলছে, ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে ১৭ হাজার ৪৫ জন, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৯৯৩ জন, ২০১৯ সালে ছয় হাজার তিন জন, ২০২০ সালে এক হাজার ৩৭৭ জন, ২০২১ সালে এক হাজার ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছিল।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে ২০২১ সালের জুন মাসে এক হাজার ৫৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫৪ জন এবং জুলাইয়ে দুই হাজার ৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮২ জনের শরীরে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া যায়। ২০২২ সালে ১ হাজার ২১২ জনের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। যা বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছিলো ২২২ জন। শুধুমাত্র মে মাসে ২৭ জন, জুন মাসে ১৫৯ জন। এবছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৭৭৯ জন।
চলতি বছর মার্চে ৫৫ জন, এপ্রিলে ৭৯ জন, মে মাসে ২৩৩ জন জুন মাসে ২৩৬ জন যারমাধ্যে জুনে দুমদুম্যা ইউনিয়নে ১৬৫ জনের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে।
দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্র্যাকসহ ইউনিয়ন পরিষদের সম্মিলিত ভাবে সমন্বয় করে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ না নিলে এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অনন্যা চাকমা বলেন, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্র্যাক থেকে বিনামূল্যে যে মশারি দেয়া হয়। তার মেয়াদ থাকে ৩ বছর। এবছর তৃতীয় বছর হওয়ার কারনে মশারি কার্যকারীতা কমে গেছে। তাই ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যায় দুর্গম এলাকাগুলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর নতুন করে ২ হাজার ৩৫০টি মশারি বিতরণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রবণতা বেশি সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী ও ব্র্যাকের কর্মীরা কাজ করছে। দুর্গমতার করানে কিছুটা তো সমস্যার মধ্যদিয়ে কাজ করতে হয়।