হেফাজত সবুজ ও শুভ্র মিশু ॥
‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে, সবাই মিলে করি পণ বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে রাঙামাটিতে পালিত হলো বিশ^ পরিবেশ দিবস। সোমবার সকালে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি, বৃক্ষ রোপণ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারা বিতরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হাজি মো. কামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন ভবনের মাত্র ৩শ মিটার দুরেই চলছে ইটের ভাটা। সেই ভাটার ধোঁয়া আর ধূলাবালুতে ভরে থাকে পুরো চৌমূহনী চত্বর। অথচ বিভিন্ন সময় পাহাড়ে ভাটা অপসারণে নির্দেশ আসলেও এদের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, এই ইটভাটার কারণে বাঘাইছড়ির চৌমুহনী এলাকায় বসবাসকারিগণ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। বসত ঘরের দরজার জানালা খোলা রাখা যায় না। চুল্লির ধোঁয়া ও বালু কণায় ঘর ভরে যায়। দোকানপাটসহ পুরো এলাকাময় ধুলার আস্তরণ পড়ে গেছে। একে পাহাড়ি এলাকা তার ওপর জনবসতির ভেতরে এই ইটের ভাটা চলে কি করে? এদের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার এতো মাত্রায় বেড়ে গেছে, যার কারণে শংকিত পুরো বিশ্ব। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপশি এর পুনঃব্যবহার নিশ্চিত এবং এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন হতে হবে। অন্যথায় এই প্লাস্টিকই বিশ্বকে গ্রাস করে ফেলবে। তিনি আরও বলেন, এখন মানুষ যেভাবে যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে কোন মাছ বা প্রাণী থাকবে না, শুধু প্লাস্টিক ভাসবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানিরা।
জেলা প্রশাসক বলেন, রাঙামাটি পর্যটন শহর, এখানে প্রতি বছর বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। তারা বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করেন। সেগুলো ব্যবহার শেষ হ্রদে ফেলে দিচ্ছেন। তাতে কাপ্তাই হ্রদ মারাত্মক দূষণের কবলে পড়বে। আমি ধারণা করছি হ্রদের তলদেশে মাটি ও প্লাস্টিক এখন প্রায় সমান সমান হয়েছে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আসলে জনে জনে সচেতন করা সম্ভব না। ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হতে হবে। এর জন্য পরিবার, সমাজ ও বিদ্যালয় থেকে সচেতনতা বোধ জাগিয়ে তুলে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্টর ছাত্র হিসাবে শংকিত হচ্ছি। উচ্চ শিক্ষা জীবনে যা যা পড়েছি, কর্মজিবনে এসে তার প্রতিফলন দেখতে শুরু করেছি। ভয়াবহ ডিজাস্টারের যে সব লক্ষণ পড়েছি তার পূর্ব লক্ষণ প্রায় বিদ্যমান। তাই এখনই যদি আমরা সচেতন ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে না পারি তাহলে ভয়াবহ বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই তিনি সকলকে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ও ধ্বংসে অধিকতর সচেতন হতে অনুরোধ জানান।
ইটভাটা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশে সাময়িক সময়েয় জন্য এসব ভাটা চলছিল। সেই আদেশ আদালত খারিজ করে দিয়ে দিয়েছে। কপি হাতে আসা মাত্রই রাঙামাটির সব ইটের ভাটার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে প্রশাসন।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মারুফ আহমেদ, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ সোয়েব খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, জেলা তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল আল মামুন।
আলোচনা সভার আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে বৃক্ষ রোপণ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারা বিতরণ করা হয়।