সুহৃদ সুপান্থ
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে,প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হ্রদে ঘেরা পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে নেই সাঁতার শেখার একটি প্রতিষ্ঠানও ! ফলে জলপাহাড়ের জীবনে প্রায় নিয়মিত ঘটছে প্রাণহানি। সাঁতার না জানা শিশু কিশোর বয়স্কদের মৃত্যু যেনো নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে পার্বত্য এই জেলায়। অথচ নেই কোন উদ্যোগ। সাঁতার শেখানোর প্রতিষ্ঠানতো দূর অস্ত,নেই সাঁতার শেখানোর কোন আয়োজনও। অথচ প্রায় প্রতিবছরই নিয়ম করেই শোনা যায় জলে ডুবে মুত্যর খবর। গত মঙ্গলবার শহরের ইসলামপুর এলাকায় ৮ বছরের শিশু মোঃ ইসমাইল,বুধবার বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় এক মাঝবয়সী ব্যক্তি কালারাম চাকমার মৃত্যুর পর শুক্রবার দুই কিশোরের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় হতাশ ও ক্ষুদ্ধ শহরবাসি। ৩ দিনে ৪ জনের মৃত্যু ও আরেকজনের মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন অনেকেই।
ক্রিকেট কোচ ও সাবেক ক্রিকেটার নাছিরউদ্দিন সোহেল বলছেন,‘ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে,যে জেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে পানির এই বিশাল হ্রদ। অথচ পুরো জেলায় সাঁতার শেখানোর কোন উদ্যোগ বা আয়োজন নেই। এটা মানা যায়না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর রাঙামাটি জেলা কমিটির সম্পাদক জিসান বখতেয়ার বলেন, অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় ও বেহুদা উন্নয়ন কার্যক্রম হয় এখানে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানেরও অভাব নাই। কিন্তু জনগণের চাহিদার সাথে এদের পরিকল্পনার কোন সমন্বয় নাই। নইলে হ্রদ বিস্তৃত একটি শহরে যেনো সুইমিংপুল বানিয়ে সাঁতার শেখানোর কোন আয়োজন থাকবে না। এইসব মৃত্যুর দায় অবশ্যই স্থানীয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষগুলোকেও নিতে হবে।’
চিকিৎসা ডাঃ নিশু সাহা বলছেন, যেহেতু এই শহর ঘিরে বিশাল জলরাশি,জেলাজুরে বিস্তৃত হ্রদ,সুতরাং অবশ্যই এখানকার মানুষের সাঁতার জানাটা ভীষণ জরুরী। কিন্তু আমরা দেখি এই ব্যাপারে কোন আয়োজন বা উদ্যোগ নেই। খুব দ্রুতই কিছু একটা করা দরকার। নইলে এইসব মৃত্যু থামবে না।’
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক শফিউল আযম বলছেন, এটা ঠিকই যে,এই জেলার মানুষের সাঁতার জানাটা জরুরী। কিন্তু এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কখনো। একসময় নিয়মিত সাঁতার প্রতিযোগিতা হতো,এখন সেটিও নাই। জাতীয় পর্যায় থেকে যখন সাঁতারের জন্য প্রতিযোগি পাঠাতে বলে আমরা পাঠাতে পারিনা। কোন একটি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের একটি সুইমিংপুল করে দেয় তবে হয়ত আমরা সেটি সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নিতে পারতাম।’
রাঙামাটি ফায়ারসার্ভিসের সহকারি পরিচালক দিদারুল আলম বলছেন, রাঙামাটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় সমস্যা। হ্রদের পানি বিস্তৃত এই জেলায় অবশ্যই সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ থাকা উচিত। প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যায় পানিতে ডুবে,সাঁতার না জানার কারণেই। আমরাও চাই এখানকার মানুষ সাঁতার শিখুক,সাঁতার জানুক এবং জীবন নিরাপদ হোক।
নিজেদের কাছে জলে ডুবে ঠিক কি পরিমাণ মানুষ প্রতিবছর মারা যায় এমন পরিসংখ্যান নেই জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, সাধারনত যেসব ঘটনায় মানুষ উদ্ধার করতে না পেরে আমারে ডাকেন,সেইসব তথ্যই শুধু আমাদের কাছে নোট থাকে। যেহেতু পুরো জেলাজুরে ফায়ারসার্ভিসের কার্যক্রম নেই এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজেরাই উদ্ধার করে ফেলে তাই আমরা অনেক তথ্যই পাইনা। তবে যতটুকুই পাই,তাও বিপদজনকই।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলছেন, ‘আসলেই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত বড় বিশাল একটি হ্রদ এখানে,ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণও। মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই সাঁতার জানা জরুরী। আমি চেষ্টা করব,খুব দ্রুতই এই বিষয়ে একটি উদ্যোগ নেয়ার,যেনো সবাই সাঁতার শিখতে পারে।’