রাঙামাটির সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে শনিবার বিকালে দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী বাজার এলাকা থেকে অপহরণের শিকার হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগাড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা এবং দুই সহযোগি কর্নিয়া চাকমা ও নিশা চাকমাকে অপহরণকারিরা ছেড়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা।
অপহরণের ২২ ঘন্টা পর আজ রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩) দুপুর ১:৩০টার সময় সন্ত্রাসীরা তাদেরকে দীঘিনালার বনবিহার এলাকা থেকে মুক্তি দেয়। মুক্তির পর তারা খাগড়াছড়িতে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এন্টি চাকমাসহ তিন জনের মুক্তির পর সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, গতকাল বিকাল ৩টার সময় রাঙামাটির সাজেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতার ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভা শেষে এন্টি চাকমা ও তার সাথে যাওয়া দুই কলেজ শিক্ষার্থী একটি মাহেন্দ্র গাড়িযোগে খাগড়াছড়ি ফিরছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টার সময় তারা দীঘিনালার কবাখালী বাজার এলাকায় পৌঁছলে একটি বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনীর ৬ জন সদস্য তাদেরকে অপহরণ করে দীঘিনালা বনবিহার এলাকায় নিয়ে আটকে রাখে।
এ অপহরণ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সন্ত্রাসীরা চাপের মুখে পড়ে। ফলে তারা আজ দুপুর ১:৩০টার দিকে অপহৃতদের অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এন্টি চাকমাসহ তিন জনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
নীতি চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘থানার কাছাকাছি এলাকায় এই অপহরণ ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন অপহৃতদের উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এ থেকেই বুঝা যায় এই অপহরণ ঘটনায় একটি বিশেষ মহলের মদদ থাকতে পারে। মূলত কাপ্তাইয়ে সংঘটিত স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের লেলিয়ে দিয়ে এ অপহরণ ঘটনা সংঘটিত করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ বাহিনী ভেঙ্গে দেয়া ও সন্ত্রাসীদের মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান।
এদিকে অপহরণের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)। সমাবেশ থেকে বক্তারা অপহরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩) বিকাল ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, ইউনাইটেড ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা ও সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা। এসময় উপস্থিত থেকে সংহতি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিম হায়দার চঞ্চল প্রমূখ।
সমাবেশে নারী নেত্রী নীতি চাকমা বলেন,২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির কুতুকছড়ি থেকে নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সস্পাদক মন্টি চাকমা ও সদস্য দয়া সোনা চাকমাকে অপহরণ করেছিল। মন্টি এবং দয়াসোনাকে অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়ায় গতকাল দীঘিনালায় পুনরায় একই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তিনি অবিলম্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী এন্টি চাকমাসহ ৩ জনকে অপহরণের সাথে জড়িত নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।