জিয়াউল জিয়া
নিবার্চনের আগেই, ভোটের আগেরদিন, ‘সুষ্ঠুৃ ও শান্তিপূর্ণ’ নিবার্চনের দাবিতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় সকাল —সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। আগামী রবিবার,৯ জন অনুষ্ঠিতব্য বাঘাইছড়ি উপজেলা নিবার্চনে দলটি ইতিময় চাকমা অলিভ নামের এক প্রার্থীর সমর্থনে এই অবরোধের ডাক দিয়েছে। যদিও ওই প্রার্থী সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত,তিনি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহসভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি।
তবে শুধু ইউপিডিএফ নয়, এই প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও। সংগঠন দুটির নেতাকর্মীরা কাজ করছেন তার পক্ষেই। অন্যদিকে এই উপজেলায় নিজেদের কোন সমর্থিত কোন প্রার্থী না দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও প্রভাবশালী নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমাকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে প্রকাশ্যেই কাজ করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি—সম্পাদকসহ প্রায় সকল নেতাকর্মীই।
এরই মধ্যে মাচালং নিবার্চন পরিচালনা কমিটি নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে অবরোধ আহ্বান করে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠালো ইউপিডিএফ।
শুক্রবার রাতে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ রাঙামাটি ইউনিট প্রধান সংগঠক সচল চাকমা বলেছেন, ‘ রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ‘ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী’ কর্তৃক নির্বাচনী এজেন্টদের হুমকি প্রদান ও নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব খাটানোর জন্য ‘ঠ্যাঙাড়েদের’ বাঘাইহাটে সশস্ত্রভাবে অবস্থানের প্রতিবাদে এবং বাঘাইহাট থেকে তাদেরকে গ্রেফতারসহ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে আগামীকাল শনিবার (৮ জুন ২০২৪) সড়ক অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছে।’
সাধারনত নিজেদের বিরোধী সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে ‘ঠ্যাঙারে বাহিনী’ নামে অভিহিত করে থাকে ইউপিডিএফ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো দাবি করা হয়, ‘ শুক্রবার দুপুর ১:৩০টারে দিকে তিনটি বড় মাইক্রোবাসে করে ৫০ জনের মতো ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী বাঘাইহাটে যায়। তারা এখন কেপিএম—এর পরিত্যক্ত অফিসে সশস্ত্রভাবে অবস্থান করছে। এছাড়া কয়েকদিন আগে থেকে তারা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অলিভ চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমিতা চাকমার নির্বাচনী এজেন্টদের হুমকি দিয়ে আসছে।’
সচল চাকমা বিবৃতিতে বলেন,‘ ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে না। তাই প্রশাসনকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে দেশের সবচেয়ে বড় ও সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড়ের কারনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া নির্বাচন আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুই জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী লড়ছেন।
চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা) সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ঘোড়া প্রতীক নিয়ে অপর প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা ইতিময় চাকমা অলিভ আনারস প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। অলিভ চাকমাকে স্থানীয় আঞ্চলিক সংগঠন সন্তু লারমা জেএসএস ও ইউপিডিএফ সমর্থন দেওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে। ২০১৯ সালে এই উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নিবার্চনে পরাজিত সন্তু লারমা সমর্থিত বড় ঋষি চাকমার অনুসারিরা নিবার্চন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে ব্রাশফায়ার করলে অন্তত ৮ জন নিবার্চন কর্মী শিক্ষক,আনসার সদস্য নিহত হন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ বেলাল হোসেন দাবি করেছেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৪ ভোট কেন্দ্রের ১৭ প্লাটুন বিজিবি, প্রতিকেন্দ্রে ৮জন করে পুলিশ এবং প্রতি ইউনিয়নে একজন করে নয় জন ম্যাজিস্ট্রেট ও একটি করে টহল টিম মাঠে থাকবে। পর্যাপ্ত পরিমান আনসার ও ভিডিপি মোতায়ন থাকবে।’
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রতিদ্¦ন্দ্বি্ দুই প্রার্থী সুদর্শন চাকমা ও ইতিময় চাকমা অলিভ এর ফোনে যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।