মিন্টু মারমা, মানিকছড়ি
পাহাড়ে এবার আম ও লিচু বাগানে গাছে গাছে মুকুলের হাতছানি। মুকুলের বাহারে খুশিতে বাগান পরিচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাগান মালিকেরা। ইতোমধ্যে বাগানে ৯০% গাছে মুকুল পরাগায়ন হয়েছে। ফলে আম নিয়ে স্বপ্ন বুনছিল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার উৎপাদনমুখী ৪৫০ হেক্টর বাগানের মালিকেরা। এমন অবস্থায় হঠাৎ যেন আশায় গুড়ে বালি। গত কিছুদিন উপজেলায় আচমকা ঝড়ো বৃষ্টিতে আম বাগানে নেমে আসে কিছুটা হতাশা। অথচ এর দু’চার দিন আগেও বসন্তের হাওয়ায় গাছে গাছে দুলছিল আমের সোনালি মুকুল। সবুজ পাতার ফাঁকে মুকুল পরাগায়ন হয়ে আমের গুঁটি বের হতে শুরু করেছে মাত্র। এরই মধ্যে চৈত্রের প্রথমে আমের ওপর প্রকৃতির এই ধকলে হতাশ আম বাগান মালিকেরা।
ঝড়ো বৃষ্টি পরবর্তী উপজেলার সবচেয়ে বেশি আম বাগান সৃজিত বাটনাতলীর সেম্প্রুপাড়া গিয়ে দেখা গেছে, সফল আম চাষি মো. আবু তাহের তাঁর সৃজিত ২৭ একর আম বাগানে সকালে বয়ে যাওয়া ঝড়ো বৃষ্টির ছোবলে ঝরে পড়া আমের গুঁটি ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এ সময় আমের পরাগায়নকৃত গুঁটি মাটিতে পড়ে থাকার দৃশ্য দেখাতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বপ্ন আজ মাটিতে মিশে গেছে। এই বছর এখন পর্যন্ত আমি ১০ লাখ টাকার ঔষুধসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। ২৭ একর টিলায় সৃজিত গাছে আ¤্রপালি, বারি-৪, কিউজাই, মাহালিশা (ব্যানানা), রাঙ্গুইন, ওয়েসটিং, চেয়াংমাইন, চাকাপাত ও সাথোইরাজ আম। বারি-৪ আমের গুটি ইতোমধ্যে কিছুটা বড় হলেও অন্য সব আম গাছের ৯০% মুকুল পরাগায়ন হয়েছে। মোটরদানা পরিমাণ আকৃতির ৫০-৬০% গুটি বাতাস ও বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে গেছে! অবশিষ্ট মুকুল ও বুট পরিমাণ আকৃতির বা একটু বড় গুটিতে আমার স্বপ্ন মিশে আছে।
এছাড়া উপজেলার রাঙ্গাপানি মালিহা গার্ডেন, বড়ডলু ডিপি পাড়া নাছির এগ্রো, গভামারা, হাতিমুড়া, কুমারী, গচ্ছাবিল, ফকিরনালা, মুলঙ্গীপাড়া, লেমুয়াসহ বিভিন্ন বাগানেও ঝড়ো বৃষ্টির ছোবলে প্রচুর গুটি ঝরে পড়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, গত মৌসুমে উপজেলায় ৪৩০ হেক্টর বাগানে আম উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন। এই বছর প্রায় ৪৫০ হেক্টর বাগান উৎপাদনমুখী। ফলন এবারও ভালো হওয়ার আশা নিয়ে বাগান মালিকদের নিয়মিত গাছ ও পরাগায়ন পরবর্তী গুঁটিতে ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা’।
আচমকা ঝড়ো বৃষ্টিতে আমের পরাগায়ন পরবর্তী গুঁটি ঝরে পড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৯০% মুকুল পরাগায়ন হয়ে গেছে। গাছে যত মুকুল আসে এবং যা পরাগায়ন হয় সব আম হয় না। কিছু ঝরে, কিছু লালচে হয়ে নষ্ট হয়। এতে আতংকিত বা হতাশার কিছু নেই। গাছের প্রতিটি ডগায় ৩/৪ টি গুঁটি টিকে থাকাই যথেষ্ট। এই পরিমাণ আম টিকে থাকলেও উপজেলায় এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে।