ইয়াছিন রানা সোহেল ॥
প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হলো রাঙামাটির আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে যায় সেতুটি। সেতুর পাটাতনে পানি উঠার কারণে ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধ্বাজ্ঞা দেয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ জুলাই থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়। ৮৬দিন পর পানি নেমে গেলে আবারো পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নিদের্শে সেতুটি খুলে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় সেতুটি স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়ে এবং সেতুর রঙ উঠে যায়। এজন্য কিছুটা সংস্কার করা হচ্ছে। এতে করে পর্যটক প্রবেশে কোন অসুবিধা হবেনা বলে জানান তিনি।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু রাঙামাটির আইকনিক ঝুলন্ত সেতু। ৮৬ দিন বন্ধ থাকায় সেতুতে প্রবেশ করতে না পেরে অনেক পর্যটক হতাশ হয়ে ফিরেছে। রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নেজামুল হক জানান, বিগত তিন মাস পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক পর্যটক হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। পর্যটন ঘাটের ট্যুরিস্ট বোট মালিকরা আর্থিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। প্রতিবছর সেতু ডুবে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তবে প্রায় তিনমাস পর ঝুলন্ত সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটকরা খুশিমনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা সাইফুল দম্পতি জানায়, বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে সেতুটি ডুবে যাওয়ার এবং সেতুতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও জেনে খুবই মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে দেখি এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। খুব ভালো লাগছে।
বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে আসা রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইপ্তি ও আরিফ জানান, দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু আর নিচে কাপ্তাই হ্রদ, অসম্ভব সুন্দর ভিউ। প্রকৃতির মাঝে এমন অপরূপ সৌন্দর্য্য সত্যিই বিরল।
দক্ষিন চট্টগ্রাম থেকে আসা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির সিএসসি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী নাঈমাতুল ইসলাম নিমা জানান, আমরা কখনো রাঙামাটি আসিনি। ঝুলন্ত সেতু দেখার রোমাঞ্চকর অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমরা অবশ্যই লাকি এজন্য যে শুনেছি এটি এতদিন ডুবন্ত ছিলো, পর্যটক প্রবেশ করা যেত না। কিন্তু আমরা এসেই দেখলাম পানি নেমে গেছে আর আমরা প্রবেশের অনুমতিও পেলাম।
পর্যটন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতি বছর সেতুটি নির্দিষ্ট একটা সময় বৃষ্টি ও উজানের ঢলে হ্রদের পানিতে ডুবে থাকে। এবছর হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ জুলাই ডুবে যায় সেতুটি। সেতু ডুবে যাওয়ায় পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ। এসময় অনেক দর্শনার্থী ভ্রমণে এসে আইকনিক এই সেতুতে ঘুরতে না পরে হতাশা নিয়ে ফিরে যায়।
তবে দীর্ঘ তিন মাস পর খুলে দেয়ার খবরে পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে সেতুতে। রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, প্রায় তিন মাস পর সেতু থেকে পানি সরে যাওয়ার সাথে সাথে পরিষ্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। কিছু সংস্কারের কাজ করতে হবে। উন্মুক্ত করে দেয়ার পর প্রতিদিন ৬/৭শত পর্যটক সেতুতে প্রবেশ করছে। ছুটির দিনে হাজার ছাড়িয়ে যায়। সামনেই পর্যটন মৌসুম, আশা করছি তখন আরো বাড়বে। গত তিন মাসের ক্ষতি সামনে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবো।

