সুহৃদ সুপান্থ
পাহাড়ের তিন জেলা রাঙামাটি খাগড়াছড়ি আর বান্দবারন,যেনো তিন পাহাড়ী বোন। বন পাহাড় লতায় পাতায় জড়িয়ে থাকা এই তিন জেলার জীবনচিত্র প্রায় একইরকম হলেও বান্দরবান আর রাঙামাটির তুলনায় খানিকটা পৃথক দৃশ্যত বিপুল সমতল ভূমির খাগড়াছড়ি। যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও অন্য দুই জেলার চেয়ে বেশ এগিয়ে এই পার্বত্য জেলা। মূল শহরের সাথে উপজেলা সদরগুলোর দুরত্বও অতটা দূরের নয়,যতটা দূরের হলো সীমানা ছুঁতেই বেলা ফুরোয় ! ফলে আবার ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই জেলার অথনৈতিক সম্ভাবনাও বরাবরই আলোচনায় থাকে। নতুন করে ৪২ টি সেতু চালু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা ছড়িয়ে পড়েছে ২৬৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পাহাড়ী জেলায়। চেঙ্গী,মাইনী ও ফেনী বিধৌত এই জেলার রামগড় চা বাগান আর সাড়ে তিন হাজার এক আয়তনের বিস্তির্ণ রাবার বাগানের সম্ভাবনাও অনেক বেড়েছে যোগাযোড় দুর্গমতা দৃশ্যত কমে আসায়।
নতুন সেতুগুলোর কারণে এই জেলার বাণিজ্যিক ও অথনৈতিক সম্ভাবনা অনেকে বেড়ে গেড়ছে বলে মন্তব্য করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুই প্রু মারমা অপু বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পার্বত্যবাসির প্রতি যে বাড়তি যতœ ও বিপুল ভালোবাসা আছে,এটি তারই প্রমাণ। এর মধ্য দিয়ে পুরো জেলার বিস্তির্ণ ও দুর্গম এলাকাগুলো যেমন মূল যোগাযোগ কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত হবে তেমনি আগের বেইলি ব্রীজগুলোর স্থলে এসব পাকা সেতু হওয়ায় যানমালের নিরাপত্তাও সুদৃঢ় হলো। সর্বোপরি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর ইতিবাচক ইমপ্যাক্ট দেখবে পুরো দেশ।’
চেয়ারম্যান আরো বলেন-‘ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশের মত খাগড়াছড়িতে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তৎকালীন বেইলী সেতু দিয়ে সড়কে যান চলাচল করতে কখন যাত্রীসহ সেতু ভেঙ্গে যায় এই ভয়ে আমরা আতংকে থাকতাম। এখন জেলা-উপজেলার সাথে একদম নিরাপদ নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য জেলাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
খাগড়াছড়ির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতি,পুরো জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা,যেটি সবস্তরের মানুষের কাছেই বেশ পরিচিত। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলছেন,‘ এটা তো সত্য যে,সেতু আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সেতু কানেক্টিভিটি যত বাড়বে,ততই বিকশিত হবে এলাকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। খাগড়াছড়ির ক্ষেত্রে এটাই বাস্তব সত্য। এই সেতুগুলো এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নিশ্চিত।’
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলছেন, খাগড়াছড়ি কৃষি নির্ভর এলাকা। এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। স্থায়ী সেতু হওয়ায় এখন ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তা মুক্ত থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। যা সামগ্রিক অর্থে জেলাবাসি আত্মসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে। এটি সরকারের সুদূর প্রসারি চিন্তার ফসল।’
খাগড়াছড়ির সিনিয়র সাংবাদিক আবু দাউদ এই বিষয়টিকে জেলার সড়কযোগাযোগে ‘নতুন দিগন্তের সূচনা’ বলেই ভাবছেন। তিনি বলছেন, সেতুগুলো যেসব সড়কে নির্মিত হয়েছে সেটা লক্ষ্য করলেই দেখবেন,সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এখানকার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা,প্রয়োজন এবং গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়েই স্থান নির্বাচন করেছে। আমি মনে করি,এটি একটি সঠিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।’
দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোঃ কাশেম নিজেদের জেলায় নতুন করে ৪২ টি সেতু উদ্বোধনের খবরে উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৭ সালে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পার্বত্য সমস্যা সমাধান ও উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির যেপথে এই পার্বত্য জেলাটির গতিময় অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো তারই নয়া সংযোগ যোগাযোগখাতের এইসব যুগান্তকারি কাজ। এর মধ্য দিয়ে দুর্গম পাহাড়ী এলাকাগুলো আরো বেশি উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবে এবং কৃষিজপণ্য দ্রুত শহরে নিয়ে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবে।’
স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা ও সাম্পারি গ্রুপ অব ইনেসিয়েটিভ’র চেয়ারপার্সন শাপলা দেবী ত্রিপুরা বলেন, আশির দশকে সাময়িক সময়ের জন্য নির্মিত অস্থায়ী ব্রীজগুলো দিয়ে প্রায় ত্রিশ বছর জেলাবাসী যাতায়াত করেছে কত দুর্ঘটনা যে ঘটেছে, কত প্রাণহানি যে হয়েছে, তার হিসেব নেই। সেতুগুলো নির্মাণ হওয়ায় পর্যটকদের ভ্রমন নিরাপদ হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট সাজেকে যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। তাই নিরাপদ যান চলাচলের জন্য স্থায়ী সেতু নির্মাণ খুবই প্রয়োজন ছিল।’